গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব সিপিডির
ফয়সাল মেহেদী: নতুন মজুরি কাঠামোতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রোববার, ৫ আগস্ট রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘মিনিমাম ওয়েজেস অ্যান্ড লাইভলিহুড কনডিশনস অব আরএমজি ওয়ার্কাস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সিপিডির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আলোচনার মূল প্রবন্ধে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যমান মজুরি কাঠামোর গ্রেড ৭ বিলুপ্ত করে নতুন মজুরি কাঠামোতে গ্রেড ৬ এর নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করা যেতে পারে। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়াও সিপিডি চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তফিজুর রহমান এবং পোশাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম নূন্যতম মজুরির সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, অঞ্চলভেদে পোশাক শ্রমিকদের ব্যয়ে তারতম্য রয়েছে। ঢাকার বাইরে গাজীপুরে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি। আর ঢাকার ভেতরেও ব্যয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। তাই মিরপুর ও তেজগাঁওয়ের শ্রমিকের বেতন এক হওয়া ঠিক নয়।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়াই সবচেয়ে বড় ব্যয় নয়। শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ব্যয় হয় মান্থলি ইন্সটলমেন্টে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যেও বড় ব্যয় হচ্ছে। এই গবেষক বলেন, ৮৬ শতাংশ শ্রমিক এখনও টয়লেট শেয়ার করেন। ৮৫ শতাংশ শ্রমিক তাদের রান্নাঘর শেয়ার করেন। ৪০ শতাংশ শ্রমিকের ঘরে কোনো টেবিল নেই। ৪৪ শতাংশ শ্রমিকের ঘরে চেয়ার নেই। মাত্র ৫ শতাংশ শ্রমিক তার বেতন পান মোবাইল বা ব্যাংকিং চ্যানেলে। শ্রমিকদের বেতন ব্যাংকে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিৎ।
প্রফেসর ড. রেহমান সোবহান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে মালিকদের পাশাপাশি বায়ারদেরও দায় আছে। বায়াররা একটি পোশাক পাঁচ ডলারে কিনে ২০ ডলারে বিক্রি করে। মাঝের এই ১৫ ডলার যায় কই। সেটাও আলোচনা করতে কবে। শ্রমিকদের বাস্তবভিত্তিক বেতনের ব্যবস্থা করতেই হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বেতনের পাশাপাশি মালিকদের সামর্থ্যরে কথা মনে রাখতে হবে। মালিকের সক্ষমতা ও শ্রমিকের ন্যায়তা দুটাই হয়- এমন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
আলোচনায় শ্রমিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, ১৬ হাজার টাকার দাবি নিয়েই আমাদের আরও বেশি কথা বলা উচিত। ৭ মাসে মজুরি বোর্ডের মাত্র তিনটি বৈঠক হয়েছে, এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আরেক শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, মজুরি বোর্ডে যিনি শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক নেতা নন। মজুরি বোর্ডে কী সিদ্ধান্ত হবে না হবে, তা জানি না। আমরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপই কামনা করবো।
বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সিপিডির পক্ষে মজুরির সুপারিশ দেওয়া অযৌক্তিক। মজুরি বোর্ডে এই আলোচনা চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নূন্যতম মজুরিকে আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিণত করছি। এর পরিণত ভালো নাও হতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতেই মজুরি নির্ধারণ করা উচিৎ।