আমনের মাঠে কিষাণী পূর্ণিমার যুদ্ধ!
শিমুল জাবালি: কুড়িগ্রামে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় পার হয়ে যাওয়ায় কৃষক অতিরিক্ত পয়সা খরচ করে শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে জমিতে সেচ দিয়ে আমন চাষ শুরু করেছেন। আর কৃষকের সাথে আমনের ফসল ফলানোর যুদ্ধে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন গৃহবধূ কিষাণী পূর্ণিমা রানী (২৮)। পূর্ণিমা রানী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের ফুলসাগর সংলগ্ন কুটি চন্দ্রখানা সেনপাড়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র সেনের স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে মিলে তার ৫ সদস্যের সংসার।
স্বামী সুভাষ চন্দ্র সেনের ঢাকায় রিকশা চালানোর উর্পাজনে বন্দকী নেয়া জমি ও স্বামীর কিছু পৈতৃক অংশ মিলে প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে পূর্ণিমা রানী এবার শুরু করেছেন আমন চাষ। দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে থাকার পর পূর্ণিমা রানী বিঘা প্রতি এক হাজার টাকার সেচ ভাড়ায় জমিতে সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ শুরু করেন। তিনি তার আড়াই বিঘা জমিতে পর্যায়ক্রমে প্রথমে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে নেন। এরপর চাষ করা জমিতে আমন চারা রোপণের জন্য মাটি সমান করতে তিনি একাই মই টানেন। সেনপাড়া গ্রামে গিয়ে কিষাণী পূর্ণিমা রানীর আমন চাষের এই বাস্তব চিত্রটি দেখা গেছে।
পূর্ণিমা রানী বলেন, আমরা অভাবি সংসারের মানুষ। নিজেদের সামান্য জমি ও অন্যের বন্দকী নেয়া জমিতে ফসল ফলিয়ে কোনোমতে জীবন চালাচ্ছি। এ ছাড়া এই কষ্টের সংসার থেকে ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে লেখাপড়া করাতে হচ্ছে। আমার বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। পূর্ণিমা রানী আরও জানান, স্বামী ঢাকায় রিকশা চালাতে যাওয়ায় তিনি একাই আমন চাষ করছেন। শ্রমিকের মূল্য দিতে না পারায় জমি তৈরি, মই টেনে মাটি সমান করা, তাতে ধানের চারা রোপণ ও নিড়ানীর মতো কাজ বেশির ভাগ সময় তাকেই করতে হচ্ছে। পূর্ণিমা রানীর দাবি, তাকে সরকারি বা বে-সরকারি পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক সহযোগিতা করা হলে তিনি একজন সফল কৃষকের মতো সকল প্রকার কৃষি পণ্য উৎপাদন করে দেশের মানুষ ও নিজের পরিবারের জন্য কাজ করতেন। পাশাপাশি সংসারের অভাব দূর করে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করতে পারতেন।