‘দীর্ঘ ২৫ বছরে যা করতে পারিনি তা শিক্ষার্থীরা করে দেখিয়েছে’
ফাতেমা আহমেদ: ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বাংলা সিনেমায় তার অবদান যেমন অসামন্য তেমনি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের তার অবদান অভুলনীয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একাই আন্দোলন করে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামে সংগঠন। রাস্তায় নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য সারা বাংলাদেশে ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি। গত ২৯ জুলাই রোববার ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত হয় দুই শিক্ষার্থী। এই ঘটনার পরে পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে। এরপর গত ৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। চলমান ‘নিরাপদ চাই সড়ক চাই’ নামে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে তা নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিনোদন প্রতিবেদক মহিব আল হাসান।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আপনি কিভাবে দেখছেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন: বিষয়টি আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমি দীর্ঘ ২৫ বছরে যা করতে পারিনি তারা তা একদিনে করে দেখিয়েছে। আমি যে দাবিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করে আসছি সেগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। এই দাবিগুলো যদি সরকার আরো আগে বাস্তবায়ন করতো তাহলে হয়তো এত জীবন সহজে অকালে ঝড়ে যেত না। সড়ক সুষ্ঠু নীতির আওতায় চলে আসতো। এটা হয়নি বলে আজ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা।
গত কয়েকদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের মতো লাইসেন্স যাচাই করেছেন। মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ এমনকি সাংবাদিকরাও লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন: আমাদের দেশের মানুষেরা কোনো উদাহরণ তৈরি করে না। আইন প্রয়োগ যারা করে তারাই যদি আইন না মানে তাহলেই আগামী প্রজন্ম কি শিখবে। প্রত্যেকের নিজের জায়গা থেকে রাষ্ট্রের আইন মানা উচিত। এই বিষয়টি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছি, আপনি একজন পুলিশ, একজন মন্ত্রী, একজন সাংবাদিক, একজন সাধারণ মানুষ আপনার লাইসেন্স নেই কেন? আপনার ড্রাইভারের কেন লাইসেন্স নেই? লাইসেন্স নেই তার জন্য মন্ত্রীদের গাড়ি আটকিয়ে বাচ্চারা প্রশ্ন করছে, আপনি স্বাধীন দেশের মন্ত্রী হয়েছেন। সে দেশের মন্ত্রী হয়ে কিভাবে আইন অমান্য করছেন? এ ধরণের প্রশ্ন যতটা লজ্জার , আইন না মানাও ততটা লজ্জার। এই লজ্জা যদি আমরা অনুধাবন করি তবে সেই লজ্জা থেকেই অবশ্যই মানুষগুলো ঠিক হবে।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কি সফল হবে?
ইলিয়াস কাঞ্চন: সফলতার পিছনে অনেক গল্প থাকে। অনেক সময় একে অপরের দিকে ধাক্কা দিতে হয়। এই ধাক্কাটা যদি আমরা সকলে সংবদ্ধ হয়ে দেই তাহলেই এই আন্দোলন সফল হবে। যদি পুরো সফল না হয় তবে কিছুটা হলেও সফল হবে। সফল হবে এই কারণে , প্রধানমন্ত্রী নিজেই কিছু দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আমরা সুফল পাবো।
শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার উপদেশ…
ইলিয়াস কাঞ্চন: এর আগে এদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ ও কোটা আন্দোলন এই আন্দোলনগুলো যৌক্তিক ছিল কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। এই আন্দোলনের মাঝে যেন ওই রকম কিছু ঢুকে না যায়। আর ছাত্রদের প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন গাড়ি ভাঙচুর না করে। কারণ, যদি তারা এমন অনিয়ম করে তবে স্বার্থান্বেষী মহল সুযোগ নিবে। এইজন্য ছাত্ররা গাড়ির ও সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি যেন না করে।