১ লাখ দক্ষ চালক তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার দুর্বল চিত্তের লোক আমার সঙ্গে না থাকাই ভালো: প্রধানমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন: নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিক নয় এবং এতে সরকারের বিব্রত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদের দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগমাখা মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা রসিকতা করেই বলেন, এতো দূর্বল চিত্তের লোক আমার সঙ্গে থাকবে কি করে? শক্ত থাকতে হবে, নার্ভকে শক্ত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মতো দুর্বল চিত্তের (উইক নার্ভ) মানুষ আমার সঙ্গে না থাকাই ভাল। এদিকে প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখন দেখছি ফেসবুক একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বাচ্চাদের আন্দোলন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা তো কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। ওরা বাচ্চা, ওরা শিশু তাই আন্দোলনটা জমাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকার কোনো রকম বিব্রত নয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করায় এখন যে কেউ কোনো ধরনের যাচাই-বাাই ছাড়াই বিভিন্ন ইস্যুতে ফেজবুকে গুজব ও অপপ্রচার চাল্য়া। এটা এখন একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভার সিনিয়র এক সদস্য জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই টেনশনে ছিলেন। তাদের সাইড টকে (আশেপাশের আলোচনা) কয়েকজন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে উদ্যোগ প্রকাশ করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা তো আন্দোলন শুরুই করতে পারেনি। বৃষ্টিতে ভিজেনি। রোদে পুড়েনি। রোদে, বৃষ্টিতে ভিজলেই না আন্দোলন জমে। আর এই আন্দোলনেই যদি আপনারা (মন্ত্রিসভার সদস্য) নার্ভাস হয়ে যান তাহলে কি চলবে।
বৈঠকে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর খসড়ার বিষয়ে আলোচনায় কয়েকজন মন্ত্রী বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করেন। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রীরা বলেন, ১৯৮২ সালে এ শাস্তি ৭ বছর ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে বাস-মালিক শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শাস্তি কমিয়ে ৩ বছর করা হয়।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয় অনেক পর্যালোচনা করে এক্ষেত্রে শাস্তি পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই পাঁচ বছরই রাখাটাই যু্ক্িতযুক্ত হবে। তবে ছোট-খাট কিছু দুর্ঘটনার জন্য আইনের তফসিলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথা আইনের তফসিলে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইনে যে সব অনিয়মের কারণে দুই বছরের সাজা হয় সেসব বিধানগুলো মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে করার কথা বলে তফসিলে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তফসিলে যা আছে তা বিধান অনুযায়ী সামারি ট্রায়াল হবে। তখন মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য বলেন, না মোবাইল কোর্ট এমনিতেই সাধারনের কাছে একটা আতঙ্ক, তাই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই এসব ট্রায়াল করা হউক। প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি দিলে আইনে মোবাইল কোর্টের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
আলোচনাকালে সড়ক পরিবহন আইন সংশ্লিষ্ট, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা কেউই কোনো কথা বলেন নি। তবে শেষ দিকে আইন বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আগের চেয়ে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হওয়ায় বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে।
এদিকে বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ওয়েট মেশিন স্থাপন নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ওয়েট মেশিন রয়েছে যা অন্যান্য সড়কে এই মেশিন নেই।
এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আরও ৪০টি সড়কে ওয়েট মেশিন স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যত সংখ্যক গাড়িকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে তত সংখ্যক চালক তৈরী হচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এডিবি’র সহায়তায় তারা ১ লাখ দক্ষ চালক তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষ চালকের সঙ্কট কিছুটা হলেও কমবে।