নতুন সড়ক পরিবহন আইন কি পারবে শিক্ষার্থীদের আস্থা ফেরাতে?
নাসিমা খান মন্টি : ২৯ জুলাই রোববার শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের সামনে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং আরো ৫ জন আহত হবার পর বিক্ষোভে ফেটে পরে সারাদেশ। গতানুগতিক আন্দোলন বাদ দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব কাঁধে নেয়। এর ফলে শহরের লোকাল বাসসহ বাইরের বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ করে বাস-ট্রাক মালিক সমিতি। ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছিলো। তবে দুর্ভোগে পড়লেও কিশোর-কিশোরীদের দাবির সাথে একাত্মতাই জানিয়েছেন তারা। কারণ সন্তানসহ তারা নিজেরাও নিরাপদে চলাচল করতে চান।
এরই প্রেক্ষাপটে অনেকদিন অনুমোদন না হওয়া সড়ক পরিবহন আইনটি পাশ করার উদ্যোগ নেন সরকার এবং গত ৬ অগাষ্ট এটির খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে তা চূড়ান্তভাবে পাশ করার জন্য সংসদে তোলা হবে। ধারণা করা হচ্ছে এই আইন পাশ হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমবে। এখন জানা প্রয়োজন কি আছে এই আইনে এবং এই আইন শিক্ষার্থীদের দাবির কতটা পূরণ করতে সক্ষম।
আমরা যদি চূড়ান্ত খসড়ার একটু ভালোভাবে পড়ি তবে দেখা যাচ্ছে, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেনী পাশ ও হেল্পারকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ হতে হবে, চালকের বয়স নুন্যতম আঠারো বছর হতে হবে, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে জরিমানা ও কারাদন্ড বিধান রয়েছে।। গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট বাধতে হবে এবং মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। সেক্ষেত্রেও জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান আছে। এছাড়া হত্যার উদ্দেশে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে প্রমানিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
এখন আমার প্রথম চিন্তার বিষয় কোথাও শিক্ষার্থীদের বাসে তুলতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি চালানোর সময়ে সতর্কতামূলক কোনো বিষয় এই আইনে আছে বলে আমি দেখিনি। যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে গাড়ি যাবার সময় সর্বোচ্চ সর্তকতা থাকার বিষয়। এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে চলাচলের সময় স্পিড নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি না তোলার বিষয়েও এর কোনো বিধান দেখা যায়নি। সপ্তম অধ্যায়ে শব্দদূষন ও পরিবেশ দূষনমুক্ত এলাকা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালকে যুক্ত করা যেতে পারে। আমাদের দেশে যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই তাই আইনের সঙ্গে এটা যুক্ত করা জরুরী।
দ্বিতীয়ত, ট্রাফিক পুলিশ এবং বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে মোবাইল কোর্ট বসানো হয় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে এই আইনে কিছু আছে কিনা। কারণ সড়কে চালক বা গাড়ি পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো আইন ভঙ্গ করছে কিনা এটা দেখা ও তদারক করার দায়িত্ব তাদের। এখন এই দুটি প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব কার? এবং তাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য কোনো জরিমানা বা দন্ডের বিধান চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা যায়নি। সড়কের এই আইনগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। যেমন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির কাগজপত্র সব নবায়ন করা আছে কিনা, চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছে কিনা বা সিট বেল্ট বাধা, গাড়ীর গতি, এক কথায় রাস্তার পথচারীরা রাস্তার নিয়ম মানছেন কিনা এই সকল বিষয় দেখা ও এর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্টের দায়িত্ব। ট্রাফিক পুলিশের জবাবদিহি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে করবে এরকম কোনো বিধান এই খসড়ায় আমার চোখে পড়েনি। এছাড়া হাইওয়েতে ট্রাফিক পুলিশকে আরো বেশি কার্যকর করা হবে কিনা? মহাসড়কগুলোর দুর্ঘটনাতেই প্রচুর মানুষ মারা যায় বা পঙ্গু হয়। বিশেষ করে রাতে ও ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে মহাসড়কে বাস চলাচলে বেশি সর্তকতা প্রয়োজন।
এই আইনটি সংসদে চূড়ান্তভাবে পাশ করার আগে আর একটু বেশি সতর্কতা কি নেয়া প্রয়োজন? কারণ আইনের অভাবে যদি আমরা দোষি ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বা তাদের সাজা দিতে না পারি তবে আমাদের এই প্রচেষ্টা আবারও ব্যর্থ হবে। এবং সরকারসহ আমরা অভিভাবকরা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে আস্থা হারাবো। সূত্র: চূড়ান্ত খসড়া আইন