৬ অডিট আপত্তির সাড়ে ৬ কোটি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে জমাদানের নির্দেশ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুর্নীতির পাহাড়!
আসাদুজ্জামান সম্রাট: স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সরকারের সাড়ে ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ৩০ দিন সময় বেধে দিয়েছে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা শেষে এ সময় দেয় কমিটি। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, মো. শামসুল হক টুকু এবং রেবেকা মমিন অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০১০-১১ এবং তদপূর্ববর্তী অর্থ বছরসমূহের হিসেবের ওপর মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ২০১০ -২০১১ এ অন্তর্ভুক্ত আপত্তির অনুচ্ছেদ ১,২,৩,৪,৫ এবং ৬ মোট ৬টি অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত মোট টাকার পরিমাণ ৬ কোটি ৪২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯শত ৩৩ টাকা নিয়ে আলোচনা হয় এবং অডিট আপত্তিগুলো কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে ঠিকাদারকে প্রদত্ত অগ্রিম সমন্বয় না করেই চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করায় সরকারের ৮৫ লাখ টাকা এবং সুদ বাবদ ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫১ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭শত ৫১ টাকা আর্থিক ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে প্রমাণক অডিট অফিসে জমাদানের অনুশাসন প্রদান করা হয়। তবে এ ধরনের ব্যত্যয় আর যাতে না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়াও আরো যেসব বিষয়ে একই নির্দেশনা দেয়া হয় সেগুলো হলো- সিডিউল বিক্রয়লব্ধ এবং অন্যান্য অর্থ বাবদ ২ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৮শত ৫৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে প্রাইভেট ব্যাংকে নিজস্ব হিসেবে জমা রাখা, পিপিআর-২০০৮ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রাক্কলন অনুমোদর না করা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কাজের মূল্য বাবদ ৪৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত ৮১ টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ, চুক্তির শর্ত মোতাবেক অসমাপ্ত কাজের জন্য ঠিকাদারের নিকট হতে অবশিষ্ট কাজের অতিরিক্ত কাজের ব্যয়িত টাকার ২০ শতাংশ আদায় না করায় সরকারের ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার ২শত ৬৯ টাকা ক্ষতির বিষয়টিও রয়েছে।
বৈঠকে সরকারের বিধি উপেক্ষা করে বরাদ্দের অব্যয়িত সর্বমোট ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪ শত ৭৭ টাকা সরকারি খাতে সমর্পন না করা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে কার্যসম্পাদনে অনীহা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ৫ বছরেও কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় চুক্তিপত্র বাতিলসহ ঠিকাদারের পারফরমেন্স সিকিউরিটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার বাজেয়াপ্ত না করায় আর্থিক ক্ষতি এবং জনগণ স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায় পূর্বক প্রমাণক অডিট অফিসে জমাদান এবং ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তি করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে সিএন্ডএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অডিট অফিস এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।