‘নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে না’
সোহেল রহমান: সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা ও সুদের হার যৌক্তিকীকরণে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে ব্যাংকিং খাতে আমানতে ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হচ্ছে। তাই ব্যাংক আমানতের সুদহার থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পার্থক্য অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমাতে চায় সরকার। তিনি বলেন, সাধারণত সঞ্চয়পত্রের সুদহার আমরা বাজার রেট থেকে ১ বা দেড় শতাংশ বেশি রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন এটা আছে ১১ শতাংশের বেশি, যা ব্যাংকের আমানতের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং এটাকে একটু কমাতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রও রয়েছে। এগুলোর সংখ্যাও কমিয়ে আনা হবে। কমিটি এসব বিষয়ে সমীক্ষা করবে। তবে রিপোর্ট যাই আসুক, আগামী নির্বাচনের আগে সঞ্চপত্রের সুদহার কমানো হবে না। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আসছে। এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের লিঙ্ক থাকবে। সুতরাং সঞ্চয়পত্র খাতে কোন ব্যাংকে বা কোথায় কার কত বিনিয়োগ আছে সেটা বের করা যাবে।
সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলেই সেটা চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। সুতরাং ব্যাংক একাউন্ট থাকলেই আয়ের উৎস জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয় নয়, পয়সার জন্য এ খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট অর্থ প্রবাহের প্রায় ২২ শতাংশ।
ব্যাংকে সুদহার কম ও শেয়াবাজারে বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো হলে স্বাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবে Ñসাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, সুদহার একটু কমলেও এখানে বিনিয়োগ নিরাপদ। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অংশ হিসেবে এটা চালু থাকবে। আমাদের পলিসি হচ্ছে, আমরা সবসময় বাজার রেটের থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি রাখি। কিন্তু এটার পার্থক্যটা অনেক বেশি হয়ে গেলে আমরা সুদহার রিভিউ করি।
বৈঠকে সিএজি ও সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার : সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরমেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।