মতিনুজ্জামান মিটু: হালকা সুগন্ধযুক্ত টক-মিষ্টি স্বাদের বিদেশি ফল জাবটিকাবার পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। কালো আঙ্গুরের মতো এই ফল চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর নামে পরিচিত এই ফল ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। ব্রাজিলের বাজারে এটি খুবই প্রচলিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হক বলেন, সম্ভবত বছর ৩০ আগে সর্ব প্রথম ইংরেজি নামের এই জাবটিকাবা ফলের চারা এনে কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারে লাগান হয়। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় চিরসবুজ বৃক্ষ জাবটিকাবা ফলের পরীক্ষামূলক চাষ হয়ে আসছে। মাঝারি ঝোপালো প্রকৃতির পূর্ণ বয়স্ক জাবটিকাবা গাছ ২০ মিটার উচু হয়ে থাকে। ফল গাছের কা-ের সঙ্গে লেগে থাকে। বীজ থেকে চারা হয়ে ফল ধারণে ১০ থেকে ১২ বছর লাগে। কলমের গাছে ৭ থেকে ৮ বছরে ফল ধরে। গ্রাফটিং করে যে গাছ পাওয়া যায় তা থেকে ৫ বছরেও ফল পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে কোনো অনুমোদিত জাত নেই।
চাপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. সাইফুর রহমান বলেন, এই সেন্টারে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের একটি বড় এবং ৮ বছর বয়সের ১২টি গাছ রয়েছে। এছাড়া রংপুর, জামালপুর ও বান্দরবান সেন্টারেও জাবটিকাবার গাছ রয়েছে। বছরে দুই বার অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং এপ্রিল থেকে জুন মাসে জাবটিকাবা গাছে ফুল ও ফল আসে। ফল প্রথমে মিস্টি এবং পরে টক ও কস স্বাদের হয়ে থাকে। এখানকার বড় গাছটিতে অনেক বছর ধরেই ফল ধরছে। এ ফল যারা খেয়েছে তারা সবাই ভাল বলেছেন। এখানে ফল খাওয়া ছাড়াও ফলের বীচি থেকে চারা তৈরি করে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য ১৫ টাকা। এটি সামান্য অম্লীয় ও আদ্র মাটি পছন্দ করে। তবে সঠিক সেচ ব্যবস্থায় ক্ষারীয় মাটিতেও জন্মে। সঠিকভাবে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করলে সারা বছরই ফল ধরে। এ ফল নিয়ে এখনো দেশে কোন গবেষণা এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষিবিদরা জানান, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের তাজা ফল সংগ্রহের ৩-৪ দিন পর গাজন প্রক্রিয়ায় পচিয়ে জ্যাম, মদ, লিকার তৈরি করা যায়। এর চামড়া সূর্যে শুকিয়ে খেলে হেমোপটাইসিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়া ও টনসিলের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। জাবটিকাবা গাছটি বহু শাখাবিশিষ্ট। ডালপালাও বেশ শক্ত। পেয়ারা গাছের মতোই শুকিয়ে গেলে এর ছাল-বাকল উঠে আসে। পাতা দেখতে অনেকটা কামরাঙ্গা ফলের মতো। শীতের পরই গাছ জুড়ে ফুল আসে। এর কাঁচা ফল সবুজ হয়। পাকলে চকচকে খয়েরি রঙ ধারণ করে, ভেতরে বেগুনি-লাল। সম্পাদনা: মোহাম্মদ রকিব হোসেন