বঙ্গমাতার ৮৮তম জন্মদিন উৎযাপন আন্দোলন শিখেছি মায়ের কাছে: প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলন কীভাবে গড়ে তুলতে হয়, সেটি তিনি শিখেছেন তার মায়ের কাছে। পাকিস্তান আমলে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে থাকা অবস্থায় বা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভূমিকা তুলে ধরে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
গতকাল বঙ্গমাতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসার ৮৮ তম জন্মদিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জানান, রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে কতটা সহজ করেছেন তার স্ত্রী। তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কতটা প্রভাব রেখেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শৈশবে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা, বাবার দুই বারের মন্ত্রিত্ব প্রাপ্তি ও বরখাস্ত, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা, গ্রেপ্তার, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। আর এর সব কিছুর পেছনে মায়ের ভূমিকাও বর্ণনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার রাজনীতির পেছনে আমার মায়ের বিশাল অবদান রয়েছে। বঙ্গমাতা কীভাবে নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন, যুদ্ধের পর বীরাঙ্গনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করেছেন, সেটিও জানান তার মেয়ে।
বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকা অবস্থায় তার নির্দেশনা কীভাবে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন, সেটিও জানান শেখ হাসিনা। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা প্রস্তাব তোলার পর তাকে গ্রেফতারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ মে আব্বাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবির পক্ষে আন্দোলনের ডাক দিল আওয়ামী লীগ। আমার মা ই আয়োজন করলেন ৭ জুনের হরতাল।
আব্বার সঙ্গে দেখা করে মা এসে খবর দিলেন, কোনো আট দফা না, ছয় দফাই ঠিক। মাঠকর্মী, ছাত্র, ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সমস্ত সংগঠন ছয় দফার পক্ষে। ওপরের দিকে কিছু নেতা, এখন নাম বলার দরকার নাই, অনেকে বেঁচেই নাই, তারা চলে গেল ওই দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয় দফাই থাকল।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের পেছনে বঙ্গমাতার দৃঢ়তা ছিলো।
সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার চক্রান্তের অভিযোগ এনে ১৯৬৮ সালে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার না করিয়েই বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আইয়ুব খানের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সেটা ভেস্তে দেন বঙ্গমাতা। প্যারোলে অর্থাৎ সাময়িক মুক্তি দিয়ে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছে, সেখানে যাবেন। আমাদের নেতারা যথারীতি সবাই তৈরি। আব্বাকে বুঝাতে চলে গেছেন, একখানা প্লেনসহ চলে আসলেন বড়বড় হোমড়াচোমরা নেতারা সকলে।
আমি গেলাম ক্যান্টনমেন্টে। গিয়ে দেখি, নেতারা ভেতরে, আমাকে যেতে দেবে না। ওখানে ছোট কাঠের গেট, আমি গেটের দাঁড়ানো, আমি তাকাচ্ছি, আব্বা আমাকে দেখে কি না। আব্বা আমাকে দেখে চলে আসলেন কাছাকাছি। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোর মা কী খবর দিয়েছে বল, চিঠিটিঠি কিছু দেয়ার সরকার নেই। আমি বলেছি, মা বলে দিয়েছে, এরা প্যারোলে নিতে এসেছে। আম্মা ইন্টারভিউয়ের জন্য দরখাস্ত দিয়েছে। মার সাথে কথা না বলে প্যারোলে যাবেন না।
বঙ্গবন্ধু গিয়ে তার সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাকে বুঝাতে যাওয়া নেতারা তখন যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। সেখানে বঙ্গমাতাকে একজন বলেন, আপনি এটা কী করলেন ভাবী? আপনি এটা ঠিক করেননি। আপনি জানেন না ওনাকে তো মেরে ফেলে দেবে? কয়েকজন আগে তো সার্জন্ট জহুরুল হককে মেরে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মা শুধু বললেন, আপনি কেবল একজনকে নিয়ে চিন্তা করছেন। একজনকে মেরে ফেলেছে। আরও তো ৩৩ জন আছেন। তাদের স্ত্রীরাও তো বিধবা হবে। আমি তো তাদের কথাও চিন্তা করব। ওনি প্যারোলে যাবেন কেন, তাহলে মামলা তুলতে হবে, প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে, তারপর উনি যাবেন। এরপর গণআন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ৭০ এর নির্বাচনে জেতে আওয়ামী লীগ। আর ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
উনি যদি সত্যি প্যারোলে যেতেন, বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হতো না। আমার মায়ের সময়োচিত সিদ্ধান্তই তো আমার দেশ এগিয়ে গেল। ৭ মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধুকে নির্ভার করেন বঙ্গমাতা। ভাষণের আগে কত জনের কত পরামর্শ, আমার আব্বাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। সবাই এসেছে, এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে। আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।