নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি ‘২০৪০ সাল নাগাদ ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার একটি অংশ আসবে আমদানি করা বিদ্যুত থেকে। তিনি বলেন, ২০৪০ সাল নাগাদ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ৯০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। গতকাল কাঠমান্ডুতে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে নেপালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ চুক্তির ফলে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া গতি পাবে বলে সরকার আশা করছে। এই সমঝোতার আওতায় নেপাল থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়গুলো রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কাঠমান্ডুতে নেপালের জ্বালানি, পানি ও সেচ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত।
নসরুল হামিদ বলেন, নেপালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে সে বিদ্যুৎ দেশে নিতে পারবে। ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ৯০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ভারত থেকে ইতোমধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে এবং আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় নেপাল থেকে বাংলাদেশ জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চায়। এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে । বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অল্প পয়সায় বিদ্যুৎ পাব। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নেপালে পৌঁছানোর পর শুক্রবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নসরুল হামিদ। এরপর জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত ও দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়াতে এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং একটি স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে গতবছর ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে। ভারতের জিএমআর এনার্জি নেপালে ’আপার কারনালি’ প্রকল্পের আওতায় ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য গত বছর জিএমআরইয়ের সঙ্গে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ভারত হয়ে আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ নেপালে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। এ বিনিয়োগে উভয় দেশ উপকৃত হবে। আগামী ৬ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৮’ এ নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ বিষয়ক মন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রতিমন্ত্রী। নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ বিষয়ক মন্ত্রী বর্ষমন পণ অনন্ত বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে নিয়েছে নেপাল। বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা নেপালের প্রয়োজন।