রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী নারী শ্রমিকদের সহযোগিতা কে করবে?
নাসিমা খান মন্টি : গত কিছু মাস ধরে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা অত্যাচার ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে তাদের কর্মদেশ সৌদি আরব থেকে ফিরে আসছেন। গত মে মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় চারশত নারী শ্রমিক ফিরে এসেছে প্রায় নিঃস্ব হয়ে। এমনকী তারা দেশে এসে তাদের নিজেদের পরিবারের কাছেও জায়গা পাচ্ছে না কেউ কেউ। তাদের বেশির ভাগের শরীরে রয়েছে অত্যাচারের নানা চিহ্ন। গরম খুন্তির ছ্যাকা, কারো পা ভাঙাসহ নিষ্ঠুর অত্যাচারের নানা চিহ্ন। তবে নির্ধারিত পারিশ্রমিক না পাওয়া, বেশি ঘণ্টা কাজ করানো, নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে না পারাও অনেক নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসার কারণ। তবে সম্প্রতি রিফুজি এবং মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)-এর সংলাপে একজন মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, ৯০ শতাংশ গৃহস্থালী শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হয়, বিশেষ করে সৌদি আরবে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কার্যক্রমের তথ্যমতে, সৌদি আরব থেকে গত তিন বছরে প্রায় ৪০০০ নারী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছে। বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকরা বড় আশা নিয়ে গিয়েছিল নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। কিন্তু তারা ফিরে আসছে নিঃস্ব হয়ে। আয় দূরে থাক, সৌদিতে কাজ নিয়ে যেতে যে খরচ তারা করেছে সেই টাকাও তুলতে পারেনি অনেকে। বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশন (বোমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত অভিবাসী নারী শ্রমিকদের শোষণের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো এবং সৌদি সরকারকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যে নির্যাতিত হলে তারা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেবে। ব্র্যাকের অভিবাসন কার্যক্রম প্রধান শারিফুল হাসান বলেন, এই সব শ্রমিকদের দেশে ফেরার প্রাথমিক কারণ হিসেবে যৌন ও শারীরিক নির্যাতন বলা হচ্ছে। তবে তাদের অত্যাচারের সংখ্যার পরিমাপযোগ্য পরিসংখ্যান তৈরি করা যায় না, কারণ অত্যাচার কোনো পণ্য নয়। তবে ফিলিপিনস এবং শ্রীলংকা তাদের দেশ থেকে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে, তার মানে বলা যায় কোনো সমস্যা আছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের উচিত বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে কথা বলা।
বাংলাদেশের শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, দেশে এ বছরের রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। এই রেমিট্যান্স বাড়ার ক্ষেত্রে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকদের অবদানও কম নয়। নিজের এবং দেশের ভাগ্য বদলের জন্য যে কাজ তারা করতে গিয়েছিল সেটার জন্য দেশ থেকে তাদের কী পাওয়ার আছে? সরকার কি তাদের উপর অবিচার দূর করতে আর একটু কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন না?
আশার বিষয় হচ্ছে ৩১ জুলাই হাইকোর্ট দেশে ফেরত নারী শ্রমিকদের তালিকা চেয়েছেন, যারা যৌন ও শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকার। এছাড়া নারী পুরুষ সকল শ্রমিকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আশা করা যাচ্ছে এবার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে কাজ নিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। সূত্র: ২৮ জুলাই, ২০১৮, ঢাকা ট্রিবিউন, সংলাপ প্রতিবেদন, আরএমএমআরইউ
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি