৯ বছরে কোটি টাকা আমানতকারী বেড়েছে সাড়ে ৫২ হাজার
সোহেল রহমান: দেশে কোটিপতির সংখ্যা কতোÑএ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে বিতর্ক যা-ই থাকুক প্রতি বছরই দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা ৯ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার কোটিপতি আমানতকারীর উত্থান ঘটেছে। গড়ে বছরওয়ারি কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৮২৬ জন। তবে এটা শুধু রেকর্ডেড কোটিপতি আমানতকারীদের সংখ্যা। আন-রেকর্ডেড কোটিপতির সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন (ডিসেম্বর ২০০৮) দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬০০ জনে। অর্থাৎ গত ৯ বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিনগুণেরও বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহাজোট সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে (২০০৯Ñ২০১৩) কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ হাজার ৪৭৭ জন। ওই সময় গড়ে বছরওয়ারি কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৫ জন। আর বর্তমান মেয়াদের গত চার বছরে (২০১৪Ñ২০১৭) কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২১ হাজার ৯৬০ জন। গড়ে বছরওয়ারি কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৪৯০ জন।
এদিকে বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের ৯ বছরে এ বিপুল সংখ্যক কোটিপতি আমানতকারীর উত্থানের বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তার মতে, ‘ইট ইজ নট ব্যাড সাইন। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, শিল্পায়ন বেড়েছে। তবে কারা এ সব বিত্তের মালিক হচ্ছেন এবং এর ফলে অসাম্য বাড়ছে কি নাÑ এ সব নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।’
সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ-এর মতে, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেখা যাবে, আগামীতে যে সরকার আসবে, তখন এ সংখ্যা আরও বাড়বে এবং এটা বাড়তেই থাকবে, কমবে না।’ তিনি বলেন, “স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল, সেটা ছিল ‘ওয়েলফেয়ার ইকোনমি’। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর সেটা হয়ে গেছে ‘পুঁজিবাদী অর্থনীতি’। আর পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে টাকা কামানোটাই বড় কথা। লুটপাট, চুরি এগুলো কোনো বিষয় নয়। তবে আগে এগুলো অতটা ডাই-হার্ট ছিল না, এখন যতটা হয়েছে। তবে পুঁজি বিকাশের ফলে প্রচুর উন্নতি হয়েছে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।”
তার মতে, ‘সরকার যেটা করতে পারে সেটা হচ্ছেÑ এ সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে রাখা এবং যে বৈষম্য বাড়ছে সেটা কমিয়ে আনা। কিন্তু এর জন্য যে কমিটমেন্ট থাকা দরকার, সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখছি না।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৬ জন এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার অধিক আমানতকারীর সংখ্যা মাত্র ৭১ হাজার ৬০০ জন এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতকারীর মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ হচ্ছে কোটিপতি এবং তাদের আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।