নির্বাচনমূখী ঈদে বাণিজ্য ৬০ হাজার কোটি টাকার কোরবানি হয়েছে ১ কোটির বেশি পশু
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানি হয়েছে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। সবমিলিয়ে এক কোটি ১৬ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এই ঈদে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চামড়া শিল্পের তিন সংগঠন- বিটিএ, বিএইচএসএমএ ও বিএফএলএলএফইএ সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ বাড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পশু বিক্রি বাবদ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা, পশুর চামড়া বেচাকেনায় ২ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পরিবহন খাতে ২০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া যাকাত, মসলা, মাংস কাটা-কাটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম-মুয়াজ্জিন মিলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের ঈদুল আজহায় গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হয়েছে। কোরবানির পশুতেই বাণিজ্য হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচার প্রচারণার সঙ্গে উপহার এবং দান খয়রাতেও এবার অর্থপ্রবাহ বেশি।
জানা গেছে, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোটাতাজাকৃত গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ২০ সহ¯্রাধিক এবং ভেড়া-ছাগল ১৮ লাখ ২৬ সহ¯্রাধিক। বাকিগুলো অনুৎপাদনশীল গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শুধু উৎসবই নয়, অর্থনীতিও আবর্তিত হয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পোশাক, খাদ্য, ভ্রমণ, মসলা, যাকাত ও বিনোদনসহ নানা খাতে বেড়ে যায় অর্থের প্রবাহ। বিশেষ করে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু বাবদ ব্যয় হয় হাজার-হাজার কোটি টাকা, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে তোলে। এবারও এর ব্যত্যয় হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪ লাখ পশু লাখ কোরবানি হয়েছিল। যার মূল্য ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। এবার ধারণা করা হচ্ছে গরু কোরবানি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
প্রতিটি হাট থেকে নেয়া তথ্য অনুযায়ী বিবিএস বলছে, গরু কোরবানিতে শীর্ষে রয়েছে রাজধানীবাসী। গরু কেনাকাটার পেছনে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের গড়ে ব্যয় হয় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। গত বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত অর্ধশত হাটে সাড়ে ৫ লাখ গরু কেনেন ঢাকাবাসী। গত বছর দেড় লাখ ছাগল কোরবানি হয়েছে। এবার আরো ২৫ হাজার
বিশ্লেষকরা জানান, কোরবানির মাধ্যমে উপকৃত জনগোষ্ঠী প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটির কাছাকাছি। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের অনেকে জাকাত ফান্ডে অর্থ দিয়ে থাকেন। অর্থ দেন এতিমখানায়, মাদরাসায়। যারা গরু লালন-পালন করেন, তারা অনেক অর্থ পান। আবার কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে কসাই ও যারা মাংস কাটাকাটি করেন, তাদের হাতেও অর্থের সমাগম ঘটে। হুজুর, ইমাম, মুয়াজ্জিনরা কিছু অর্থ পান। এ ছাড়া এটাকে কেন্দ্র করে আমাদের কামার-কুমোর সমপ্রদায় চাঙ্গা হয়। ইলেকট্রনিক পণ্য বিশেষ করে ফ্রিজের একটা আলাদা বাজার তৈরি হয়। মসলার আমদানি বাড়ে। এ ছাড়া কোরবানি ঈদে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে ওঠে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাড়তি গতি এনে দেয় বলে তারা মনে করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানির অর্থনীতিটা প্রতি বছর বড় হচ্ছে। আগে শুধু কোরবানি দেয়াটাই ছিল মুখ্য। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যটন, ঈদ বোনাস। রমজানের ঈদের অর্থনীতি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা, আর কোরবানির অর্থনীতির আকার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২০ থেকে লাখ পশু বেশি কোরবানি হয়েছে। তিনি বলেন, সারা বছরের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদে সংগ্রহ হয়। এ বছর আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হবে।