২০ টাকা কেজিতে বিক্রি পশুর হাড় ও শিং
ফাতেমা আহমেদ: এক সময় কোরবানির পশুর হাড়, শিং, খুরা, দাঁত ইত্যাদি ফেলে দেয়া হতো। এখন কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পশুর হাড় ও শিং। বাদ যাচ্ছে না লেজের চুলও। পশুর সব কিছুই মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বার্তা২৪
পশুর হাড় প্রতি কেজি ১৮-২০ টাকা এবং লেজের চুল প্রতি কেজি ৭শ/৮শ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। চট্টগ্রামের আতুরার ডিপুতে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী পশুর হাড়, শিং, চুল সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা.মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জানান, ‘এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া মিলিয়ে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। আমাদের জনগণ পশুর চামড়া ব্যবসা নিয়ে যতটা সচেতন, পশুর হাড়, শিং, খুরা, দাঁত, নাড়িভূঁড়ি- এসবের বাণিজ্যিক উপযোগিতা নিয়ে বলতে গেলে একেবারেই অসচেতন। গবাদি পশুর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, জাপান, ভারত, ইরান, ইন্দোনেশিয়াসহ ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোতে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে পশুর ফেলনা এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রচুর চাহিদা। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাজার সম্পর্কে পেশাদার কসাইরা অবগত আছেন। তারা এগুলো সংরক্ষণ করে বিক্রি করে। কিন্তু গ্রাম গঞ্জের লোকজন বা নগরবাসীর অনেকেই এসব নিয়ে তেমন ওয়াকিবহাল নয়। একমাত্র সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দেশের হাড়গুলো পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। অথচ একমাত্র কোরবানির পশুর হাড়, শিং, খুরা, দাঁত বা সংশ্লিষ্ট ফেলনা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রপ্তানি করে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশুর হাড়কে গুঁড়া করে তৈরি হয় ‘নিটবন’ নামের এগ্রো খাবার। এটি লেয়ার-ব্রয়লার মুরগির খাবারে প্রতি কেজিতে ১৮-২০ শতাংশ মেশানো হয়। প্রতি বছর এই ‘নিটবন’ এবং হাড়ের গুঁড়া আমদানিতে আনুমানিক ২৫০ কোটি ডলার খরচ হয়। তাছাড়া পশুর হাড় দিয়ে ক্যাপসুলের নমনীয় মোড়ক ও ক্যামেরার ফিল্ম, চিরুনি, পুঁতি, বিশেষ এক ধরনের লাঠি, মূল্যবান মেলামাইন সামগ্রী, অপারেশন পণ্য তৈরি করা হয়। পশুর শিং দিয়ে উন্নত মানের বোতাম তৈরি করা হয়। পশুর খুরা দিয়ে পশুপাখির জন্য তৈরি হচ্ছে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার। লেজের চুল দিয়ে সুতা, ব্রাশ তৈরি করা হয়।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার পানওয়ালাপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ সংলগ্ন এলাকার কয়েক ব্যক্তি পশুর হাড়-গোড়ের ব্যবসা করে থাকেন। এই হাড় ব্যবসায়ীরা কোরবানির সময় পশুর হাড়-গোড় সংগ্রহ করে গুদামজাত করে রাখে। পরবর্তীতে রপ্তানিকারকদের কাছে তা বিক্রি করেন।
নগরীর আতুরা ডিপুর হাড় ব্যবসায়ের সাথে জড়িত মো. আবদুল কাদের বলেন, কোরবানীর চামড়ার পাশাপাশি বড় একটা বাণিজ্যিক খাত হলো পশুর হাড়-গোড়। বিদেশে এসবের চাহিদা আছে। কোরবানির পর ভাঙারি ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লা থেকে এগুলো সংগ্রহ করে আনেন। আমরা তাদের কাছ থেকে এগুলো কিনে আনি। আবার ব্যক্তিগত ভাবেও আমরা সংগ্রহ করে থাকি। আবার অন্যসময় কসাইদের কাছ থেকেও হাড়গোড় সংগ্রহ করে থাকি। তবে অনেকেরই এই হাড়গোড়ের বাজার সম্পর্কে এখনো ধারণা নেই। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব হাড় পঁচে গলে নষ্ট হয়। রপ্তানিকারকদের কাছে পশুর হাড় প্রতি কেজি ১৮-২০ টাকা এবং লেজের চুল প্রতি কেজি ৭শ/৮শ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।
পশুর ফেলনা এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নানা ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্যবান ঔষুধের মোড়ক,অপারেশন সামগ্রী,এগ্রো খাবার, বোতাম, চিরুনিসহ হরেক রকম পণ্য প্রস্তুত করা হয়। দেশে এসব পণ্য সামগ্রী প্রস্তুতে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠান যেমন নেই অন্যদিকে, পেশাদার মাংস ব্যবসায়ীরা ছাড়া পশুর হাড়, শিং, খুরা বা দাঁতের বাণিজ্যিক উপযোগিতা সম্পর্কে জনগণের সম্যক ধারণাও নেই। গত বছরও এ খাতে রপ্তানি বাবদ বাংলাদেশ ৭-৮ কোটি টাকা আয় করেছে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন,পশুর ফেলনা হাড়, শিং, খুরা বা দাঁত বাজারজাতকরণ বা রপ্তানির ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে সম্ভাবনাময় এ খাতে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।