গুম হওয়া ব্যক্তির তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখে পরিবার: এইচআরডব্লিউ
লিহান লিমা: ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মীর আহমেদ বিন কাসেমকে তার স্ত্রী, বোন এবং দুই কন্যার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। গুম হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে নিজের বন্ধু এবং স্বজনদের কাছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কাসেম। বিন কাসেমের বাবা মীর কাসেম আলির মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলার এক মাস পরই গুম হন তিনি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিতার আইনে জোরপূর্বক গুম হল যখন কোন ব্যক্তিকে সরকারি কাস্টডিতে রাখা হয় তবে রাষ্ট্র তার সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে অস্বীকার করে। গুম মানবাধিকালের চরম লঙ্ঘন। এটি ব্যক্তিতে আইনী সুরক্ষা প্রদানে বাধা দেয় এবং তার ওপর চরম নির্যাতন, বিচারবর্হিভূত হত্যার মত ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এমনকি ছেড়ে দেয়ার পরও শারীরিক এবং মানসিক ট্রমায় ভোগার মত ব্যধির সৃষ্টি হয়। তারা আর কখনো ন্যায়বিচারের জন্য দাবি করতে পারে না। পরিবারও জানতে পারে না তাদের প্রিয় ব্যক্তি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। এছাড়া পরিবার ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইনসুরেন্স সহ অন্যান্য আইনি বিষয়ে প্রবেশ করতে পারে না। এই আইনী বিশ্লেষণ গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের জন্য এক ভয়াবহ ব্যথা। বিন কাসেমের স্ত্রী বলেন, সন্তাননা জানে না কেন তাদের বাবা ঈদেও আসে না।
শ্রীলংকাতে গৃহযুদ্ধ এবং বিক্ষোভের সময় ১০ হাজারের মত মানুষ গুম হয়ে যান। ২০০৯ সালে যুদ্ধ বন্ধ হ্ওয়ার পর পরিবার তাদের স্বজনদের ফিরে আসার আশায় এখনো বুক বেঁধে রয়েছেন। কাশ্মীরে ‘অর্ধ বিধবা’ নামে একটি কথা প্রচলিত হয়েছে, যে নারীদের স্বামী নিখোঁজ হন তাদের জন্য এটি প্রচলিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমানে আফগানিস্তানে যুদ্ধ, বেলুচিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর এবং ভারতে অস্থিতিশীলতা, শ্রীলংকা এবং নেপালে গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপে রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে গোপন গ্রেপ্তার এবং জোরপূর্বক গুমের মত মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনা ঘটছে। কাউকে অবৈধভাবে আটক করার পর পরে ছেড়ে দেয়া হয়, অনেকের দেহ উদ্ধার করা হয় এবং হাজারো নিখোঁজ হয়েই থাকেন।
৩০ আগস্ট গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার, স্বজন, অধিকারকর্মীসহ গোটা বিশ্ব আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালন করে। তারা সরকারে এই সব সমস্যার সমাধান, সঠিক উত্তর এবং সংখ্যা প্রদানের আহ্বান জানায়। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে বিশ্বের ১১২ টি দেশে ৫৬ হাজার ৩৬৩টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকার এর উত্তর দিতে অনিচ্ছুক।
এইচআরডব্লিউ জানায়, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে নিরাপত্ত বাহিনী স্বজনদের সামনে তুলে নেয়ার পরও গুমের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তার বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তি ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে। এইচআরডব্লিউ আন্তর্জাতিক গুম দিবসে বিশ্বের প্রতিটি দেশ এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এই জঘন্য সংস্কৃতি বন্ধের জন্য অতিসত্ত্বর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায়। তারা জানায়, সরকারের উচিত গুম হ্ওয়া মামলাগুলোর স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেয়া এবং পরিবার যাতে তাদের স্বজনদের অবস্থান সম্পর্কে তদন্তের খবরাখবর পায় তা নিশ্চিত করা। এই নৃশংসতা বন্ধ করা প্রয়োজন। ওয়েব।