আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে: কাদের
আনিসুর রহমান তপন : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আদালত কি রায় দিবে তা জানিনা। তবে আমরা ন্যায় বিচার চাই। গ্রেনেড হামলার রায় হলে বিএনপি কিভাবে নেতৃত্ব সংকটে পরবে এমন প্রশ্নের জবাবে, এ কথা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এ রকম নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই এর দায় কোনো ভাবেই এড়াতে পারেনা বিএনপি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের লাইব্রেরীতে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, দিনে দুপুরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমাবেশে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে কোনো হামলা করা সম্ভব নয়। অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতা না থাকলে কিভাবে প্রকাশ্যে এমন গ্রেনেড হামলা করে কর্তব্যরত পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেল? এরপর বিএনপি গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করে দিল। তদন্ত করতে স্কটল্যা- ইয়ার্ড আসতে চাইল, দিল না। এফবিআইকে ঘটনার তদন্ত করতে দিল না। তারা ১ সদস্য বিশিষ্ট তথাকথিত একটি বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করলো। সেই কমিশন রিপোর্ট দিল এটা প্রতিবেশি একটা দেশের কা-। তারপর বিএনপি কি করলো, জজ মিয়ার মিথ্যা নাটক সাজালো। একারণে স্বভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বিএনপি যদি এই হামলার সঙ্গে জড়িত না থাকে তবে কেন তারা এমন একটি নৃশংস ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইলো? কেন তারা বিচারের পথ রুদ্ধ করতে এতসব কা- করলো? সব বিষয়গুলো বিবেচনা করলেই বোঝা যায় তারাই এই ঘটনার মাস্টারমাই-। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপির টার্গেটই ছিল শেখ হাসিনাকে হত্য করা। ওইদিন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, আর তিনিই সন্ত্রাসের শিকার হলেন। ২১ আগস্টের এ ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ ২২টি তাজা প্রান চলে গেলে। সঙ্গে আরো নাম না জানা দু’জন প্রান হারালেন। ঘটনাস্থলে রক্তের স্্েরাত বয়ে গেলো। সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ করতে গিয়ে উল্টো আমরাই সন্ত্রাসের শিকার হলাম। তিনি বলেন, বিচার শেষ হয়েছে। এখন রায় দিবে আদালত এবং আমরা এই ঘটনায় ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি।
দেশি-বিদেশি চক্রের উস্কানিতে একটি অপশক্তি নির্বাচন বানচাল করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে জানিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এর তথ্য-প্রামাণ সরকারের হাতে রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ওয়ান-ইলেভেনের নীল-নকশা বাস্তবায়ন করা। এই অপশক্তি ও ছদ্মবেশীরা ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমকে কেন্দ্র করে বিদেশিদের সঙ্গে নিয়ে গুজবের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। হতাশা প্রকাশ করে এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, গুজব ছড়ানো বিদেশি ওই নোবেল জয়ীর সঙ্গে আমাদের দেশের একজন নোবেলজয়ীও জড়িত রয়েছেন। বিদেশে গিয়ে তিনি আল জাজিরা টেলিভিশনের মাধ্য উস্কানিমূলক গুজব তথ্য ছড়াচ্ছেন। এই নোবেল বিজয়ী একসময় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-েও জড়িত ছিলেন।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। কারণ তারা ভয়ের মধ্যে থাকে। তাদের লিডারশীপের মধ্যে সেকরিফাইজ নেই। তো এত ভয়ের মধ্যে যারা থাকেন তারা আবার আন্দোলন করেন কিভাবে? বিএনপি শুধু লেকচার দিচ্ছে। তাদের এ্যাকশনে সাহসের কোনো নজীর নেই। নেতারা মাঠে থাকেন না তো কর্মীরা কিভাবে মাঠে থাকে? প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, নেতারা এয়ারক-িশন রুমে বসে পুলিশের গতিবিধির খোঁজ নেয়। তারা আবার কিভাবে আন্দোলন করেবে? তাদের আগ্রহ এখন আর ক্ষমতায় যাওয়া নয়, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে কিভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায় তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বে জামাত-জঙ্গি-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো নির্বাচনের আগে নাশকতামূলক গুপ্ত হামলা চালাতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বাইরে কেউ যদি নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে চায় তবে তা আইন-র্শঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন বানচালের যত অপচেষ্টাই করুক নির্বাচন সঠিক সময়ে সংবিধান অনুযায়ী হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের জন্য, গণতন্ত্র রক্ষায় জনস্বার্থে সবসময় অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগ অতীতে রাজপথে ছিল, বর্তমানে দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য রাজপথে আছে, ভবিষ্যতেও রাজপথে থাকবে। ফলে বিএনপি আন্দোলনের জন্য যতই হুমকি দিক না কেন, কোন লাভ হবে না। কারণ জনগণ সরকারের ওপর আস্থাশীল।
আওয়ামী লীগে অনেক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে এমন বিষয়ে সেতুমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি তালিকা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। সারাদেশ থেকে তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে একটি কমিটির মাধ্যমে। ফলে আগামী নির্বাচনে অনুপ্রবেশকারীরা আগামী নির্বাচনে দলের টিকিট পাবে না। এমনকি ছাত্রলীগের অসম্পূর্ণ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ঘোষণার সময়েও তাতে অনুপ্রবেশকারিরা স্থান পাবেনা বলেও এসময় জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। অথচ ডিজিটাল সুবিধা নিয়ে বিরোধী পক্ষ বারবারই সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছে। এই বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। ভালো কিছু করতে গেলে সেখানে সুফল-কুফল দুটোই রয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সম্প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনেও অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে। সেটা সবাই দেখেছে। তবে ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আর সেটাই আমাদের দরকার। তিনি বলেন, ডিজিটাল সম্পর্কে আমি এ কথাই বলবো, এতে মানুষ কতোটা সুবিধা পাচ্ছে। আজ ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সুবিধার আওতায় জনগণ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল বাড়িতে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পরিশোধ করতে পারছে। আমেরিকা-ইউরোপের স্বজনের সঙ্গে অল্প খরচে কথা বলতে পারছে। কিছু দিন আগে ভারতের বাঙ্গালোর থেকে আমার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে। তাই বলে কি ফেসবুক খারাপ।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প সম্পর্কে এসময় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী জানান, পদ্মাসেতুর কার্যক্রম ৫৭ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রোরেলের কার্যক্রম ২০২০ সালে সম্পন্ন হবে। আর সড়ক পরিবহন আইন সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে বলেও জানান মন্ত্রী।