আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
ব্যাংক ঋণের ৭৫ শতাংশের যোগান দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো
সোহেল রহমান: স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গত আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের প্রধান যোগানদাতা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) ব্যাংকগুলো। পরবর্তীতে ২০০০ সাল পর্যন্তও ব্যাংক ঋণের সিংহভাগ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দখলে। কিন্তু সেই চিত্র এখন আর নেই। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠেছে বেসরকারি (বাণিজ্যিক ও ইসলামী) ব্যাংকগুলো। গ্রাহক বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ৭৫ শতাংশেরও অধিক ঋণ বিতরণ করছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে এসব ব্যাংকে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে মোট ঋণ গ্রহীতার ৩১ ভাগেরও কম। অন্যদিকে সাড়ে ৬৭ শতাংশ গ্রাহককে ঋণ দিয়েও মোট ঋণ প্রবাহের মাত্র ২১ শতাংশ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) ব্যাংকগুলোর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত চার দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের হার কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। বর্তমানে ঋণ বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ইসলামিক ব্যাংকগুলোর চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত: ১৯৮৩ সালে দেশে বেসরকারি খাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯০ সালে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের ২১ শতাংশ। এরপর গত আড়াই দশকেরও বেশি সময়ে বেসরকারি (বাণিজ্যিক ও ইসলামী) ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের হার ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৯১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশেরও বেশি ঋণ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৬ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। অবশিষ্ট প্রায় ৪ ঋণ বিতরণ করেছে দেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিদেশি ব্যাংকগুলো। মোটামুটিভাবে এই চিত্র বহাল ছিল ১৯৮০ সাল পর্যন্ত।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে ১৯৯০ সালে। আলোচ্য বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ শতাংশে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আরও কমে দাঁড়ায় প্রায় ২২ শতাংশে। ওই বছর রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতেও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র প্রায় ৭ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের মাত্র ১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
তবে ঋণ বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ব্যাপক কমলেও
সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহীতা হচ্ছে এই ব্যাংকগুলোতে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতা হচ্ছে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ জন। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে মোট ঋণ গ্রহীতার সাড়ে ৩৯ শতাংশ। মূলত: কৃষি ঋণ বিতরণের কারণেই বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেশি বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে ২৮ শতাংশ। এর বিপরীতে বেসরকারি (বাণিজ্যিক ও ইসলামী) ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৩১ শতাংশ।