কী হবে সেপ্টেম্বরে?
মাসুদা ভাট্টি : ঈদের আনন্দ এবারও কেটেছে এক শঙ্কা নিয়ে যে, কী হবে ঈদের পরে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে? ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস আমাদেরকে বেশ কিছু সম্ভাবনা এবং আশঙ্কার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে তো? বিএনপি নির্বাচনে যাবে তো? এসব প্রশ্নের উত্তর সেপ্টেম্বরেই পাওয়া যাবে না হয়তো কিন্তু এ মাসেই এর একটা ধারণা অন্ততঃ পাওয়া যাবে বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছেন জাতীয় নির্বাচনের। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সে অনুযায়ী অক্টোবরের শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে বলে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা অন্ততঃ ১০০টি আসনে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভোট গ্রহণ বা ইভিএম ব্যবহার করতে চান। যাতে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোটের সবচেয়ে বড় আপত্তি রয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়েই। এমতাবস্থায় অক্টোবরে যদি তফসিল ঘোষণা করে কমিশন তাহলে সেপ্টেম্বরেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না-করা নিয়ে কিছু কিছু আলামত স্পষ্ট হবে নিশ্চিত। আমরা সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে যদি সাজাই তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায় এরকম:
১. বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনসভা করার দাবী ইতোমধ্যেই জানাচ্ছে, সেখান থেকে বৃহত্তর গণআন্দোলনে সরকার পতনের ডাক দিতে পারে।
২. সরকার পতনের ডাক দিলে সরকারও বসে না থাকার সম্ভাবনা থাকবে, ফলে সংঘাত অনিবার্য রূপ নিতে পারে।
৩. ইতোমধ্যেই আওয়ামী-বিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো ভাবেই আর কারো কাছে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নয় বলে নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানা ও লন্ডন থেকে বার্তা এসেছে বলে গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে।
৪. দেশের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি কী করবে তা এখনও নিশ্চিত নয়, হয়তো তারা বিএনপি’র দিকেই তাকিয়ে থাকবে, কখন তারা সরকারকে ফেলে দেয় এবং তার ফল বামরাও একটু খেতে পারে।
৫. বিদেশি ক’টনীতিক এবং দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে নাক গলানো পক্ষগুলি এই সেপ্টেম্বরেই তাদের বিকল্প খোঁজার চেষ্টায় যে তৎপরতা ইতোমধ্যেই শুরু করেছে তা আরো জোরদার করবে সন্দেহ নেই।
৬. প্রশাসনের ভেতরকার সরকার-বিরোধী অংশের তৎপরতা আরো জোরালো হবে এবং এই সেপ্টেম্বরকেই মনে করছে তাদের শেষ সুযোগ মরণ-কামড় দেওয়ার।
৭. দেশের ভেতরকার জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত পক্ষটি এই সেপ্টেম্বরকেই নিশ্চিত ভাবে মনে করছে যে সরকারের ওপর আঘাত হানার শেষ সুযোগ, কারণ অক্টোবর থেকে যে সরকার থাকবে তা আসলে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্তির পর বিশেষ নির্বাচনী সরকার।
৮. সেপ্টেম্বরেই বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সন্দেহ করছেন যে, বিএনপি এই রায়ে ফেঁসে যাবে আর বিএনপি তার বক্তব্যকে রায়কে প্রভাবিত হওয়ার মতো বিষয় বলে অভিহিত করেছে। ফলে একুশে আগস্ট মামলার রায় নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে নতুনতর উত্তেজনা তৈরি হবে।
৯. দেশের সুশীল রাজনৈকিত পক্ষটি কোন্্ ক্ষেত্রে কার ওপর ভর করবে তা নির্ভর করবে এই সেপ্টেম্বরেই, নিশ্চিত ভাবেই যে পক্ষটি সেপ্টেম্বর মাসে নিজেদেরকে অধিকতর যোগ্য প্রমাণ করতে পারবে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য সুশীল সমাজ তাদের পক্ষেই হয় জোরালো ভ’মিকা রাখবে না-হয় তারা একেবারেই চুপ মেরে যাবে।
১০. সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ভেতরকার পক্ষটি যারা মনে করবে যে, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন বা পরবর্তী সরকারে তাদেরকে নাও নেওয়া হতে পারে, তারাও এই সেপ্টেম্বরেই সক্রিয় হয়ে উঠবে সরকার-বিরোধী তৎপরতায়।
তার মানে হচ্ছে সর্বার্থেই সেপ্টেম্বর ২০১৮ আমাদের জাতীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের শঙ্কা ও আশাবাদ জাগানিয়া মাস। সেপ্টেম্বর আসতে আরও দু’দিন বাকি কিন্তু আলামতগুলো এখনই দৃশ্যমান।