আজ কাঠমান্ডুতে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শুরু আলোচনায় প্রাধান্য পাবে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আজ থেকে নেপালের কাঠমান্ঠুতে সাত দেশীয় জোট বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। বাণিজ্য-বিনিয়োগ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন। এছাড়াও পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, , প্রযুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন খাত নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সূচি ছাড়া বাকি ৬ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার যোগ দিচ্ছেন।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনের সাইড লাইনে হাসিনা মোদি বৈঠকটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভবত ঢাকা-দিল্লি শীর্ষ পর্যায়ে এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বৈঠক। কূটনীতিকরা বলছেন, মোদি-হাসিনা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরই শেখ হাসিনা বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাইড লাইন বৈঠকের জন্য টকিং পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, তিস্তা, রোহিঙ্গা, সীমান্ত সমস্যা, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ইস্যু। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনা যদি আন্তরিক হয় তাহলে টকিং পয়েন্ট একেবারেই গৌণ হয়ে যায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, এবারের বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তিস্তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। ভারতের পক্ষ থেকে আসাম ইস্যু আসতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, ভারতে আসামের চলতি এনআরসি(নাগরিক তালিকা) বিতর্কের আঁচ ঢাকাতেও পড়েছে। যদিও ভারতের তরফে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ভোটের মুখে ঢাকার স্পর্শকাতরতার দিকটি অবশ্যই দিল্লি বিবেচনায় রাখছে। ভারতের তরফ থেকে এমন কিছু করা হবে না, যাতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আনন্দবাজার লিখেছে- আসন্ন বৈঠকটিতে মোদি এনআরসি নিয়ে কথা বলবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। তাকে আশ্বস্ত করা হবে। পাশাপাশি মোদি এ কথাও জানাবেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকাকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না। নয়া দিল্লি বিষয়টি নিয়ে সর্বতোভাবে ঢাকার পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারতের পরবর্তী সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে কলকাতার ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সাত দেশীয় জোট বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের আগে প্রগ্রামিং কমিটি, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকগুলো শুরু হবে আগামী ২৮ আগস্ট। ওই বৈঠকগুলোর সুপারিশগুলো নিয়ে বিমসটেক শীর্ষ নেতারা জোটের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও নীতিনির্ধারণ করবেন। বর্তমানে বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্বে আছে নেপাল। ২০১৬ সালে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নেপাল তার অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে তা আয়োজন করতে পারেনি।
১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করা বিমসটেকের সচিবালয় ঢাকায় অবস্থিত। গত বছর থেকে বাংলাদেশি কূটনীতিক এম শহীদুল ইসলাম বর্তমানে বিমসটেকের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।