আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
কাঠমান্ডু ঘোষণায় শেষ হলো বিমসটেক সম্মেলন রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি বিদ্যুৎ সমঝোতা স্মারক এবং সন্ত্রাসবাদ দমন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুই চুক্তি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : কাঠমা-ুু ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। গতকাল শুক্রবার সম্মেলনের শেষ দিনে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে সংগঠনটির সদস্য রাষ্ট্রগুলো। চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে সন্ত্রাসবাদ দমন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে আরো দুটি চুক্তি। পরে এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হবে, তার ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। নেপাল ও ভুটানের যথেষ্ট পরিমাণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে, যা তারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিদ্যুৎ কেনাবেচার মত বিষয়ে বিমসটেক দেশগুলো এর আগে পদক্ষেপ নেয়নি, তবে এবারের রিট্রিট সেশনে নেতাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে এ খাতে বড় ধরনের সহযোগিতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ কিছুটা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, মুক্তবাণিজ্য ক্ষেত্র বাড়াতে নেতারা আলোচনা করেছেন।
শহীদুল হক বলেন, আসলে দুটি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ভুটান একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আছে। সুতরাং ভুটান এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে আমাদের কোঅপারেশন অন ক্রিমিনাল মেটারসে যেটা আমরা সবাই রাজি হয়েছি, ভুটানও রাজি হয়েছে। তারা ওয়েট করবে, অক্টোবরের পরে যখন নতুন সরকার আসবে, সবাই মিলে সই করবে। সুতরাং ওইটা ফাইনাল হয়ে আছে। আমরা ধরে নিতে পারি যে এটা হবে।
শহীদুল হক বলেন, আর এ ছাড়া যে গ্রিড কানেকশনসের ব্যাপারে একটা এমওইউ হবে। একটা এনার্জি উৎপাদন, এনার্জি ডিস্ট্রিবিউশন, এনার্জির প্রাইসিং, এনার্জির রুলস অ্যান্ড প্রসেডিওর এগুলো নিয়ে আলাপ করবে। বেসিকালি ইলেকট্রিসিটি; বিশেষ করে হাইড্রো ইলেকট্রিসিটির বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, এতে আমাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুই নম্বর হলো যে, এই এফটিএ নেগোসিয়েশন এবং ইমপ্লিমেন্টেশনের মাধ্যমেই কিন্তু আমরা বড় যে দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ নেগোসিয়েশন করছি, তাতে অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে। আপনারা জানেন, তিন-চারটা দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন চলছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এ সম্মেলনে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এ বিষয়ে এম শহীদুল হক বলেন, যেহেতু বিমসটেকের আওতায় পলিটিক্যাল ইস্যু প্লাস অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে আলাপ করা যাবে না, বাই-লেটারাল অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে। সে জন্য আমরা এটা করিনি। তার মানে এই নয় যে, এটা সাইড লাইনে আলোচনায় আসেনি।
সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল সকালে একান্তে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাত দেশের শীর্ষ নেতারা। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিমসটেকের ১৪টি খাত নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর তারপরই শুরু হয় সমাপনী অধিবেশন। সেখানে আন্তঃআঞ্চলিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাত দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও। সমাপনী অধিবেশনে আজ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের হাতে বিমসটেক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। বিমসটেক সম্মেলনের শেষ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বিমসটেক লিডার্স রিট্রিট সেশনে আলোচনায় এ প্রস্তাব করেন। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সদস্য দেশের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশসমূহের মধ্যে ব্যবসা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন-বিতরণ এবং বিদ্যুৎ এক দেশ থেকে সদস্য অন্য দেশে কেনাবেচাসহ সার্বিক বিষয়ে নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ সব বিষয়ে পর্যালোচনা করতে এবং কোন দেশের কি পরিমাণ বিনিয়োগ হবে অথবা কোন দেশ কি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারবে তা ঠিক করতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনেও সম্মত হয়েছেন নেতারা।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রপথে বিমসটেক ক্রুজ চালু করার প্রস্তাব করেন এবং নেপাল ও ভুটান তাদের প্রয়োজনে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারে বলেও জানান। এছাড়া নবায়নযোগ্য জালানি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে শহীদুল হক জানান। সৌর বিদ্যুতের জন্যও আঞ্চলিক গ্রিড করার প্রস্তাব করেন শেখ হাসিনা। কারণ এ অঞ্চলের অনেক দেশেই দিনে দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যালোক পাওয়া যায়।
বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে গতকালই দেশে ফিরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডু যান তিনি। নেপাল পৌঁছার পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দাশো শেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিকালে সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে সম্মেলনের উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। ওইদিন সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।