৩ মাসে লাইফ বীমার ৮ লাখ পলিসি তামাদি
ফয়সাল মেহেদী: চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিনমাসে দেশের লাইফ বা জীবন বীমা খাতে প্রায় ৮ লাখ পলিসি তামাদি হয়েছে। এর মধ্যে সংখ্যায় তামাদি পলিসির শীর্ষে রয়েছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। আর শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পলিসি তামাদি হয়েছে এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে লাইফ বীমার ৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৩৪টি পলিসি তামাদি হয়েছে। এর মধ্যে বায়রা ও ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের তামাদি পলিসির সংখ্যা ৭২.৬৬ শতাংশ বা ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬৩টি, যার মধ্যে বায়রা লাইফেরই তামাদি পলিসি ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮০টি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষের ৯৮ শতাংশ এবং তৃতীয় ও তদূর্ধ্ব বর্ষে পলিসি তামাদি হয়েছে ৯৬ শতাংশ এনআরবি গ্লোবাল লাইফের।
প্রথম প্রান্তিকের বীমা খাতের দক্ষতা মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আইডিআরএ জানায়, পলিসি তামাদির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোই অধিক দায়ি। ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এজেন্ট কর্তৃক সংগৃহীত নতুন পলিসির আইন্ডাররাইটিংয়ের গুণগত মান ভালো না থাকায় পলিসি তামাদি হয়। এছাড়া নবায়ন কমিশনের হার কম থাকায় এজেন্টের কাছ থেকে গ্রাহকরা পলিসি নবায়ন সম্পর্কিত সেবাও ঠিকভাবে পায় না। আইডিআরএ আরও জানায়, তামাদি পলিসির হার বেশি থাকা ১৯টি বীমা কোম্পানিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইডিআরএর তথ্যমতে, পলিসি তামাদির হার বেশি হওয়া ১৯টি কোম্পানির মধ্যে আলফা ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষের ৬৩ শতাংশ এবং তৃতীয় ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৪৯ শতাংশ পলিসি তামাদি। আর বেস্ট লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে তামাদির হার ৭২ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৮৬.৫৪ শতাংশ; ফারইষ্ট ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৪৭.৫৬ শতাংশ ও তদূর্ধ্বে ২৪.০৮ শতাংশ পলিসি তামাদি; গার্ডিয়ান লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ২৪.৮৪ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৬৩.২৩ শতাংশ; হোমল্যান্ড লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৫৫.৬২ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৫৮.৪৩ শতাংশ; যমুনা লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৮৪.২৩ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৬৯.৮৬ শতাংশ; মেঘনা লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৬৮ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ২.৯০২ শতাংশ পলিসি তামাদি।
এ ছাড়া মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৬৫ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৪০ শতাংশ; ন্যাশনাল লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৪৮.২৪ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৫৩.৬৫ শতাংশ; এনআরবি গ্লোবাল লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৯৮ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৯৬ শতাংশ; পপুলার লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৫৯ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ২৬ শতাংশ পলিসি তামাদি। প্রগতি লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৫৩.০৭ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ১৭.৩৮ শতাংশ; প্রাইম ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৪৮.৭৩ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৩১.৩৮ শতাংশ; সোনালী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৪৫ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ২৭ শতাংশ; সানলাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৮৯ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৮২ শতাংশ পলিসি তামাদি।
এছাড়াও সানফ্লাওয়ার লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৮৯.৬৯ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৩২.১৭ শতাংশ; স্বদেশ লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৭৭.৪৮ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৪৮.৮৮ শতাংশ; ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৬১ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ১৪ শতাংশ এবং জেনিথ ইসলামী লাইফে দ্বিতীয় বর্ষে ৪৯ শতাংশ ও তদূর্ধ্ব বর্ষে ৭৯ শতাংশ পলিসি তামাদি হয়েছে।
আইডিআরএর মতে, বেশি তামাদি হওয়া কোম্পানিগুলো বীমা আইন ২০১০ এর ৬২ ধারা এবং বীমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধিতে নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদিত সীমার চেয়ে অধিক পরিমাণে ব্যয় করে নতুন পলিসি সংগ্রহ করে। তবে সেগুলোর দ্বিতীয় বা তদূর্ধ্ব বর্ষে নবায়ন সংগৃহীত না হলে লাইফ ফান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।