ফাতেমা আহমেদ: পাবনা অঞ্চলের অনেক তাঁতী উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিক্রিতে অব্যাহত লোকসানে পুঁজি হারিয়ে কারখানা বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
তারা বলছেন, বিদেশে রপ্তানি এবং দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় তাঁত বস্ত্রের বাজার দর প্রতিদিন নিম্নমুখী হচ্ছে। সরকারিভাবে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন, এখন সকল শ্রেণি-পেশার নারী সালোয়ার-কামিজ বেশি ব্যবহার করায় শাড়ির ব্যবহার কমে গেছে। আর এতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পাবনার সাঁথিয়ার বেসিক সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, পাবনা তাঁত সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত। জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া উপজেলায় তাঁতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০০৩ সালের তাঁত বোর্ডের জরিপ অনুযায়ী হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা ৫৫ হাজার এবং বিদ্যুৎচালিত পাওয়ারলুমের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এই তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় দেড় লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসা ও পেশার লোকজন তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর ও আতাইকুলায় কাপড়ের হাট গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় ব্যাংক ও কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আতাইকুলা ও শাহজাদপুর হাটে প্রতি সপ্তাহের চারদিন কাপড় বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাপড় ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা এই হাটে এসে শাড়ি, লুঙ্গি ক্রয় করে থাকেন। প্রতিহাটে ভারতে শাড়ি ও লুঙ্গি রপ্তানি হয়ে থাকে। একসময় প্রতিহাটে ব্যাংক ও নগদসহ প্রায় দুই শতাধিক কোটি টাকার লেনদেন হতো। বর্তমানে কাপড় ক্রয়-বিক্রয়, রপ্তানি ও ব্যাংক লেনদেন অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে খেলাপী ঋণের সংখ্যা বাড়ছে।
আতাইকুলা হাটের একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান, গত তিন বছরের অনুপাতে বর্তমানে লেনদেন অর্ধেকের নিচে। বেশিরভাগ তাঁত মালিক শুধু লুঙ্গি তৈরি করে থাকেন। অন্য কোনো কাপড় তারা তৈরি করেন না। সে কারণে বাজার মন্দা হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। উৎপাদিত কাপড় কমমূল্যে, বাকিতে এবং চেকের মাধ্যমে বিক্রি করায় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারছেন না। সে কারণে খেলাপী ঋণের সংখ্যা বাড়ছে।
বর্তমানে পাবনা অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঋণগ্রহিতরা তাদের ঋণ শোধ করতে পারছেন না। সূত্র : ইত্তেফাক