কেওড়া ফল বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানিতে প্রচুর রাজস¦ আয়ের সম্ভবনা
ফাতেমা আহমেদ: সুন্দরবন ঘেঁষা পাথরঘাটার হরিণবাড়িয়া আর লালদিয়ার চর। দেখলে সবারই নজর কাড়বে। এছাড়াও রয়েছে সবুজে ভরা কেওড়া গাছ। এ গাছের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। বনাঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু গাছগুলির মধ্যে কেওড়া গাছ অন্যতম। এ গাছ পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের রক্ষাকবচ হিসেবেও কাজ করে।
কেওড়া গাছের পাতা ও ফল হরিণবাড়িয়াসহ বিষখালী ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী বনাঞ্চলের হাজার হাজার বানর ও হরিণের প্রাণ বাঁচায়। কেওড়া ফলটি টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে অনেক পরিবার রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। এই ফলের চাটনি, টক আর ডাল রান্না করে রসনা মেটাচ্ছে অনেকেই। সরকারিভাবে এ ফলটির বিক্রি বৈধ নয় বলে অনেকে অবৈধভাবে এ পেশায় ঢুকে কেওড়া পাচার করছে। তবে এটি বাণিজ্যিক হিসেবে সরকার বৈধ করলে শুধু কেওড়া গাছ নয়, কেওড়া ফলকে ঘিরেও গড়ে উঠতে পারে শিল্প।
সুন্দরবনের সবচেয়ে সৌন্দর্যম-িত গাছ কেওড়া। মাঝারি আকৃতির গাছটি ঝোপড়া হয়ে থাকে। নতুন জৈববর্জ্যসমৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের বিস্তৃত বনাঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। পাতা সরল, বিপরীতমুখী, অখ- ও চামড়ার মতো। ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। এর পাতা জিওল গাছের পাতার মতো সরু লম্বাটে। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয়। এ ফুলের মধুও সুস্বাদু। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি। বাংলাদেশে প্যানেল বানানো, প্যাক করার বাক্স তৈরি, আসবাবপত্র ও জ্বালানির জন্য কেওড়ার কাঠ ব্যবহূত হয়। গাছের ঘের নূন্যতম ৩০ সেমি হলে ২০ বছর বয়স্ক গাছ কাটা হয়।
কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু অম্ল স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীচি। সবচেয়ে বেশি উপাদেয় খাদ্য হরিণ আর বানরের। তবে বহু বছর আগে থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য এটি। এফল রান্না করে খাওয়া যায়, অনেকে ডালের সাথেও খেয়ে থাকেন এফলটি। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা লবণ দিয়ে খাওয়া যায়, আচার হিসেবেও খেয়ে থাকেন এ অঞ্চলের মানুষ। এমনকি এ ফল সিদ্ধ করে রস পান করলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও এ ফলটি পচে গেলে মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্য হিসেবেও একে ব্যবহার করে থাকেন।
কেওড়া ফল বিক্রি করা সরকারিভাবে বৈধ নয়, তারপরেও বনবিভাগের যোগসাজশে কিছু লোভী ব্যবসায়ী এ ফলটি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। অবশ্য অনেক দরিদ্র পরিবার এ ফল আহরণ ও বিক্রি করে সচ্ছল হয়েছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে শুধু পাথরঘাটা থেকেই ৫০ টনের মতো ফল বিক্রি করা হয়ে থাকে। সাতক্ষিরা, শ্যামনগর, নলতা, কুলিয়া, মৌতলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ফল পাঠানো হয়। কখনো কখনো সুবিধা বুঝে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানী বলেন, ‘কেওড়া ফল যে একটি সম্ভাবনাময় ফল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গত এক বছর ধরে এ ফল নিয়ে আমাদের গবেষণা চলছে। এ ফলটি সুস্বাদু। একারণে এটি আচার থেকে শুরু করে খাবারেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তেমনি ফুলেও রয়েছে মধু। এ ফলটিতে ক্ষতিকর কোনো কিছু এখন পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া যায়নি। সরকার চাইলে এ ফলটি রপ্তানি করে প্রচুর রাজস¦ও আয় করতে পারবে।’
বনবিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সোলায়মান হাওলাদার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেওড়া গাছ ও ফল পাচার-বিক্রি আইনত দ-নীয়। তবে সরকার কেওড়া ফল বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করলে প্রচুর রাজস¦ আয় করা সম্ভব হবে। এ ফলের অনেক গুণ।’ সূত্র: বাংলানিউজ