পাকিস্তানী ঔপন্যাসিক বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাকিস্তানকে উন্নতি দেখিয়ে দিয়েছে
নূর মাজিদ: তার নাম তারিক ফাতেহ। তিনি পাকিস্তানের তথা এই মধ্যে এশিয়ার একজন খ্যাতনামা লেখক এবং ঔপন্যাসিক। পাশাপাশি তিনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক স্কলার। গত বছর তারিক ফাতাহ ঢাকা সফরে এসে একটি সেমিনারে বক্তব্য দিয়েছেন। বর্তমানে যখন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে তখন তারিক ফাতাহ’র নির্মোহ ও প্রাঞ্জল বক্তব্য পাঠকদের মাঝে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো উদ্দীপনা সঞ্চার করবে। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতির প্রশংসা করেন। তারিক ফাতাহ’র বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনটি এখনও আমার স্মরণে আছে। সেদিন সকল তথাকথিত দেশপ্রেমিক পাকিস্তানি হাসছিলেন, কাঁদছিলাম শুধু আমরা ছয়জন। কারণ আমরা জানতাম আমরা আমাদের ভাইদের হারিয়েছি। কিন্তু, যারা হাসছিলেন তাদের হাসির কারণ ছিল, অনেকটা এমন “আব ভুখা বাঙ্গালী জান সে গায়া।” অর্থাৎ, তাদের ধারণা ছিলো পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) স্বাধীনতা লাভ করলে, সেখানকার বাঙ্গালীরা না খেয়েই মরে যাবে। সেদিন আমি আমার সহকর্মীদের মাঝে কোন অনুতাপ বা শোক দেখতে পাইনি। সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আসলে এটি (পাকিস্তান) কোনো দেশ নয়, নিছক একটি নাম। এই নাম একটি প্রতারণা যার বীজ একটি মিথ্যের জমিনে বোনা হয়েছিল। ঘৃণা, জিঘাংসা পাকিস্তানের মানুষের মাঝে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যাতে তারা নিজের জননীর (জন্মভূমির) ধর্ষণকে দেশপ্রেম হিসেবে গণ্য করেছিল। আমি জানিনা কিভাবে এক লাখ নারীকে ধর্ষণ, ৩০ লাখ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে এসে কেউ সুস্থ মাথায় বলতে পারেন যে, ‘শালা ভুখা বাঙ্গালি মর গিয়া!’, অর্থাৎ তারা লজ্জাহীনতা এবং বর্বরতার চূড়ান্ত রুপ প্রদর্শন করেছেন সেদিন।
তারা বলতো, ‘হার সাল শালা খানা ভেজনা হোতা থা।’ অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের খাদ্য সাহায্যের উপরই নাকি নির্ভরশীল ছিলো পূর্ব পাকিস্তান। আমি মনে করি, আজকের বাংলাদেশ ঐ সমস্ত মূর্খ বর্বরদের(পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর) উপযুক্ত জবাব দিয়েছে উন্নতি দেশের করে। তারা এভাবেই প্রতিশোধ নিচ্ছে। এখন বাংলাদেশের প্রতিটি সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এমনকি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা সকল দেশের চেয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি এই অঞ্চলে ঈর্ষনীয়। কেন এবং কিভাবে বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে আসতে পারলো? কারণ এই দেশটির নেতৃত্ব আছে একটি অভিজ্ঞ ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃত্বের হাতে, যারা সরাসরি বলেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আইনত বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। আর এই জন্য কৃতিত্ব শুধু একজনেরই, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই সমস্ত দুষ্কৃতিকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, তার বজ্রকঠিন সংকল্প। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তিনিই একমাত্র নেতা যার এমনটি বলা ও করার সাহস রয়েছে। তিনি সর্বদাই বলেন, আমি এসব দুষ্কৃতিকারীদের শায়েস্তা করব, ফাঁসি দেব। হাসিনা বুক ফুলিয়ে বলেন, আমি ওবামা বা ক্যামেরুন নই (প্রাক্তন ব্রিটিশ ও মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানদ্বয়)। তাদের মতো আমি দস্যু, বর্বর সৌদি রাজের সামনে মাথা নিচু করে তার দেয়া সোনার পদক নিতে আগ্রহী নই। কতো হাস্যকর আজকের বিশ্ব নেতাদের কার্যকলাপ একবার ভাবুন আপনারা। ওবামা একজন কৃষ্ণাঙ্গ, একজন কেনিয়ান অভিবাসির সন্তান। যে দেশের কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকেরা কালো আফ্রিকান হবার কারণে সৌদি আরবে কেরানি পদেও চাকরি করতে পারেন না। বাস্তবতা হলো, সত্য সর্বদাই কঠিন। আজকের বিশ্ব নেতাদের ক্ষেত্রেও সেটাই দেখা যায়।নিজ বক্তব্যের শেষে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তারিক ফাতেহ বলেন, আপনাদের কপাল দেখুন আপনাদের রয়েছে শেখ হাসিনার মতো একজন সাহসী নেত্রী, যিনি চাপের মুখে নতিস্বীকার করবার পাত্রী নন।
ফেসবুক সূত্রে তারিক ফাতাহ’র এই বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে আগ্রহী পাঠকদের জন্য। তারিক ফাতাহ বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন।সর্বশেষ তিনি বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করেছেন।