
আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
বিদ্যুৎ উৎপাদন: কুইক রেন্টালে কতটা লাভবান বাংলাদেশ?

শোভন দত্ত: বাংলাদেশের সরকার বলছে, তারা এখন ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এই সাফল্যকে তারা বড় ধরনের অর্জন হিসেবেও জনগণের সামনে তুলে ধরছে। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে, সে সময় তাদের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো এবং লোডশেডিং থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া। সেসময় এটি ছিল অন্যতম রাজনৈতিক ইস্যুও। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দশ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই সফলতার বড় অংশটি এসেছে আমদানিকৃত তরল জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে, যেগুলো বিদ্যুতের সঙ্কট মোকাবেলায় কুইক-রেন্টাল নামে বিশেষ ব্যবস্থায় স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই ব্যবস্থাকে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। এতে প্রশ্ন উঠছে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে?
গত এক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের একজন গৃহিনী রেহানা হক পলি থাকেন । দৈনিন্দন সাংসারিক কাজের পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও জড়িত। তিনি বলেন, গত এক বছরে বিদ্যুৎ নিয়ে তাকে কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি, যদিও তিনি বলছেন যে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি ঠিক একই রকম নয়। “এখানে লোডশেডিং তেমন একটা হয়ই না। এখনকার জীবন তো বিদ্যুৎ ছাড়া একেবারে অচল, মাইক্রোওয়েভ ওভেন চালানো বলুন, আর ঘরে এসি চালানো বলুন। কিন্তু ঢাকার বাইরে অবস্থা কিন্তু একই রকম না।”
গত এক দশকে বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। সরকার বলছে, এই মূহুর্তে তারা ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। সরকারের হিসেব বলছে দেশে ১২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৭৪৩ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট অর্থাৎ যা শিল্পকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ তা প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০,১৩৩ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তার কারণ কি?
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বিবিসিকে বলেন, এই সফলতার পেছনে সরকারকে নির্ভর করতে হয়েছে আমদানিকৃত তরল জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর, যার খরচ অনেক বেশি।
খরচ বেশি হওয়ায় তরল জ্বালানি নির্ভর এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই ব্যবস্থা বলে মনে করেন না। কিন্তু সরকার বলছে, কয়লা-ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা কার্যকর হতে এখনো পাঁচ ছয় বছর সময় লাগবে, আর ততদিন পর্যন্ত সরকারের হাতে বিকল্প কিছু নেই।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তো লাগবে, কয়লা, তেল বা গ্যাস যেটাই হোক। এখন বাংলাদেশে যদি গ্যাস না থাকে, তাহলে বিকল্প কি? কয়লা না হয় তেল। কয়লার জন্য তো আমরা বৃহৎ প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছি। কিন্তু এই সময়ের জন্য তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণে আমার তো অন্য কোন উপায় নেই।” সেক্ষেত্রে বাড়তি খরচ কিভাবে সামলানো হবে- বিবিসির এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, “আমার হাতে বিকল্প কি বলেন? ১০০০ ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা উৎপাদন করতে পারছি না গ্যাসের স্বল্পতার জন্য। কিন্তু কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তো কার্যকর হতে পাঁচ ছয় বছর সময় লাগবে।”
