আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
পুঁজিবাজার হবে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের এক নির্ভরযোগ্য উৎস : প্রধানমন্ত্রী
মাসুদ মিয়া: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়তে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ জন্য পুঁজিবাজার আজকে স্থিতিশীল অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দ্রুত বিকাশ ও সম্ভাবনাময় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের রজতজয়ন্তীর সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ভবিষ্যত পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভবিষ্যত পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সর্বাত্মত সহযোগিতা প্রদান করবে। পুঁজিবাজার হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের এক নির্ভরযোগ্য উৎস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কথায় প্ররোচিত না হয়ে, যথাযথভাবে জেনে এবং খোঁজ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক সরকার সেটি চায় না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের লক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকান্ডে স্থিতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারের লেনদেন কারচুপি ও অনিয়ম সনাক্তকরণে যথাযথ নিয়ন্ত্রকমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের সকল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অথরিটি ইনভেস্টমেন্ট রুলস ২০১৫ এর মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অব প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে বিএসইসি পেয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির সম্মান পেয়েছে। ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমাদের বাজারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে সমঝোতা স্বারক সাক্ষর হয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়াম ইতিমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ অন্তভুক্তিতে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন। বিএসইসির কর্মকর্তাদের উদ্দ্যেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের পদমর্যাদা, বেতন ও ভাতাদিসহ অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংকের সমমানের করে দিয়েছি। কমিশনের জন্য জনবল বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছি। কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণের লক্ষে আইনে বিধান রাখা হয়েছে। কমিশনে কর্মরত সকলের জন্য দেশে বিদেশে আরো উন্নততর প্রশিক্ষণ যাতে হয় সে ব্যবস্থা করেছি। এ জন্য বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজনও করা হচ্ছে। যাতে করে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সকল তথ্য সংগ্রহ করে নিবেন। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালোভাবে ও বিস্তারিতভাবে জেনে নিবেন। কারণ কোথায় আপনি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত কি। এ ব্যাপারে জেনে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ করে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হোন সেটা আমি চাই না। তিনি আরো বলেন, খুব বেশি লোভে না পড়ে সীমা রেখেই পা ফেলতে হবে। তাহলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০৪৩ সালে যখন বিএসইসির সূবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে, অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে পুঁজিবাজারের অবস্থান আরও বলিষ্ঠতর হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতের অন্যতম স্তম্ভ পুঁজিবাজার বিকাশে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। ফলে পুঁজিবাজার আজকের স্থিতিশীল অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দ্রুত বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে, গত সাড়ে ৯ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করে যাবারও আহবান জানান।