প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাশ না করার আহ্বান টিআইবির
ফয়সাল মেহেদী: ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে যারা মতামত দিয়েছেন তাদের অধিকাংশ সুপারিশ আমলে না নিয়ে সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-১৮’ আইন পাস না করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ আহবান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, অংশীজনদের মতামত অগ্রাহ্য করে গণমাধ্যম ও বাক্-স্বাধীনতা হরণের ঝুঁকিপূর্ণ ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ অপরিবর্তিত রেখে সংসদীয় কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। একদিকে প্রস্তাবিত বিলের ৮, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারাগুলোর ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ ও মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা তাদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে বিতর্কিত ৩২ ধারার ডিজিটাল গুপ্তচর বৃত্তির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ অনুসরণের সুপারিশ করার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখজনক।
ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার আইনি অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে। এর ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। তাছাড়া, ধারাটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং যে কোনো ধরনের গবেষণামূলক কর্মকা- পরিচালনার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে তা সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাক্-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের পথ ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ সৃষ্টি করবে। সরকার ও বিশেষ করে জাতীয় সংসদ এ আত্মঘাতী পথ থেকে সরে এসে বিষয়টি নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে আরও আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে টিআইবি আশা করে।
‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ এর ধারা ৩ এর খ তে বলা আছে ‘তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে’ এবং ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ তে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীকে আইনগত সুরক্ষা প্রদানের যে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে, সেখানে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩’ এর মতো একটি নিবর্তনমূলক আইনের বিতর্কিত ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ড. জামান।