সাক্ষাৎকারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম সমঝোতাকে প্রাধান্য দেয়ায় ঋণ আদায়ে সুফল পাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক
আবু বকর : রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ঋণ আদায়ে সমঝোতাকে প্রাধান্য দেয়ায় সুফল পচ্ছে। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে যেখানে খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ছিলো সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ সেখানে বর্তমানে এই হার ২৭ শতাংশ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম এই তথ্য জানিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, গত অর্থবছর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকটি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৪৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের লোকসানী শাখাগুলোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে ব্যাংকটি ৫৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। আর ঋণ বিতরণ করে ২৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। সংগৃহীত আমানতের অর্ধেকের বেশি অলস পড়ে আছে। একারণে আমাদের প্রত্যেক শাখাকে কঠোর যাচাই বাছাই করে ন্যূনতম ৫টি ঋণ মঞ্জুরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৬ সালে বিতরণ করা ঋণের ২২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। ঐ বছর মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান,২০১৫ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা ঐ সময়ে বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বাড়লেও এর থেকে আদায় বাড়েনি। ২০১৬ সালে আদায় হয় মাত্র ৯৫৩ কোটি টাকা।
লোকসানী শাখা প্রসঙ্গে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, লোকসানী শাখা ছিলো ৭৮টি যা বর্তমানে কমে হয়েছে ২৪টি। তিনি বলেন, মূলত নতুন চালু করা শাখাগুলো লাভ জনক হতে একটু সময় লাগে।
ঋণ আদায়ে সমঝোতাকে প্রাধান্য দেয়া প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, নোয়াপাড়ার এক ঋণ গ্রহীতা খেলাপিতে পরিণত হয়ে যায়। স্বাভাবিক পন্থায় ঐ ঋণ আদায়ের সব প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়। অবশেষে অর্থ ঋণ আদালত, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে মামলা লড়ে সর্বত্রই ব্যাংক হেরে যায়। অবশেষে ঋণ খেলাপিকে আমি আমন্ত্রণ জানাই। তাকে বলি আপনার স্বজনদের বলবেন আপনার মৃত্যুর পরে যেন আমাকে জানায়। তিনি প্রশ্ন করেন কেন? আমি বলি আপনার জানাজার পুর্বে যখন ঋণ মাপের বিষয়ে আপনার স্বজনরা সমবেতদের বলবেন তখন আমি ব্যাংকের পাওনার কথা বলবো। কারণ ঐ পাওনার অংশীদার এদেশের ১৬ কোটি জনগন। ঐ আমানত রক্ষার দায়িত্ব আমার। একথা শোনার পর তিনবার হজ্ব করা ঐ ঋণ খেলাপি হাজী ব্যাংকের পাওনা ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা মাফ নিয়ে বাদবাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।