সাক্ষাৎকারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মঈনুল আলম বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব পালন করবে আইসোটেক
শাহীন চৌধুরী : বরগুনায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে আইসোটেক গ্রুপ। আগামী ২০২২ সালে শুরুতেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল, মসজিদ মন্দির, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে এই গ্রুপটি। আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সময় ডটকমকে প্রদত্ত একান্ত সাক্ষাৎকারে তাদের এই উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মঈনুল আলম।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড-এর সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে চুক্তি হয়। ইতিমধ্যেই আমরা এই প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে আইসোটেক এমডি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত সার্টিফিকেট পাওয়ায় পর জমি অধিগ্রহণ, জমি ক্রয়, বাঁধ নির্মাণ, মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব কাজ শেষে পাওয়া যাবে স্থাপনা নির্মাণের ছাড়পত্র। বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশানবাড়ীয়া গ্রামটিই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেন্দ্রস্থল। তিনি বলে, প্রকল্পটি ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে পরিচালিত হবে।
প্রকৌশলী মঈনুল আলম বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছর এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা প্রতিটন কয়লার দর ১২০ ডলার হিসেবে। তবে কয়লার দাম কম থাকলে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে। সহযোগি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের পার্টনার ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। তারা ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তারা বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, কাজটি চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা তাতে বিজয়ী হতে চাই। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে পৌছে দিতে ২৫ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করতে হবে বলে তিনি জানান। এক্সিম ব্যাংক অব চায়না এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
সরকারের বিদ্যুৎ আমদানির নীতিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে আবাদী জমি একটি বড় সংকট তাই চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ আমদানি করা যেতেই পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সৌরবিদ্যূৎ করা গেলেও বায়ু বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা রয়েছে কারন এদেশের বাতাস সব সময় একইরকম থাকেনা।
মঈনুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও তেলের পরিবর্তে কয়লাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসবে তেমনই দেশের অর্থনীতির উপরও চাপ কমবে।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ের পাশাপাশি সামাজিক কিছু দায়িত্ব পালন করে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। এজন্য আমাদের প্রকল্প এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, প্রকল্প কাজের সুবিধার জন্য ১১২টি ভূমিহীন পরিবারের আবাসনের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি।