
আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
বিশেষ সাক্ষাৎকারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফল্যের নতুন মাইলফলকে সোনালী ব্যাংক
আবু বকর : বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে অর্থবছর শেষে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে পরিচালন মুনাফা অর্জন হয়েছে ৭০৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এই সময়ে ৪৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১৩ হাজার ১৭৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এই তথ্য জানিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে সোনালী ব্যাংক সর্বক্ষেত্রে আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করে আসছে।
একান্ত সাক্ষাতকারে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাতে সকল প্রকার গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম সাশ্রয়ীভাবে প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে ক্রমবর্ধমান সেবা চাহিদা পূরণে প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সোনালী ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে ১ হাজার ২০৯টি শাখার সবগুলোতে কোর ব্যাংকিং সলিউশন বাস্তবায়ন করেছে এবং সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এ ব্যাংক ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইজ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এবং আন্তর্জাতিক ব্রান্ড ভিসা কার্ডের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে। বর্তমানে এ ব্যাংকের ৯১টি নিজস্ব এটিএম বুথ রয়েছে এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের সাথে ১২টি কো-ব্রান্ডেড এটিএম বুথ আছে।
তিনি বলেন, দেশের যেসকল স্থানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা/কার্যালয় নেই সেখানে সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সরকারি লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। এ ব্যাংক কর্তৃক উদ্ভাবিত সরকারি লেনদেন সিস্টেম (জিটিএস) নামীয় ইন্টারনেটভিত্তিক একটি নতুন সফটওয়্যার ৬০৩টি শাখায় চালু করা হয়েছে। পেনশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ৫০৫টি শাখায় সামরিক, বেসামরিক এবং ব্যাংক কর্মচারীদের পেনশন প্রদান করা হয়ে থাকে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাব, স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাব এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় খোলা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৭টি।
তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৩ সালে এ ব্যাংক ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা অর্জনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। মুনাফার বিচারে সরকারি বেসরকারি ব্যাংকসমূহের মধ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর অবস্থান দ্বিতীয়। সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রেখে সমৃদ্ধির উন্নত সোপানে সোনালী ব্যাংককে নিয়ে যেতে পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নতুন উদ্যমে কাজ করছে। ফলে বিগত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকসানী শাখা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে শাখাসমূহের সর্বোচ্চ মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুণগত ঋণ বৃদ্ধি, শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস, ঋণ নতুন করে শ্রেণীকৃত না হওয়া, শ্রেণীকৃত এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে সর্বোচ্চ আদায় নিশ্চিতকরণ, গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন, স্বল্প সুদবাহী আমানত সংগ্রহ বৃদ্ধি, ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নন ফান্ডেড আয়ের খাত বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন গ্রাহক ও উদ্যোক্তা নির্বাচন করে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ ও কমিশন খাতে আয় বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যেই শাখাভিত্তিক স্ট্রাটেজিক অ্যাকশান প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ আরো বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণকে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দেয়ার নিমিত্তে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ২০১০ সাল হতে ৫টি শাখায় পৃথক উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম করছে। জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রমকে এ দেশের সকল জেলায় সম্প্রসারণ কারার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সে মোতাবেক শীঘ্রই আরো ৬টি শাখায় ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হবে।
