‘দুঃখজনক যে উপজেলায় চিকিৎসক থাকে না’ কোনো মেডিকেল কলেজকে আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করবো না : প্রধানমন্ত্রী
হুমায়ুন কবির খোকন : শিক্ষা ও গবেষণায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো মেডিকেল কলেজকে আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব না। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ আলাদা ও গবেষণামূলক। গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। এরইমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। এই অঞ্চলেও করব। তবে এখানে একটি কথা স্পষ্টভাবে বলে দেই, কোনো মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব না। বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ আলাদা আর বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণামূলক, বিশ্ববিদ্যালয় হবে পোস্ট গ্রাজুয়েশন। শুধুমাত্র ক্যাম্পাসে পোস্ট গ্রাজুয়েশন এবং গবেষণা থাকবে। এছাড়াও নাসিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাটা থাকবে। তিনি বলেন, স্ব স্ব এলাকায় বা স্ব স্ব বিভাগে মেডিকেল কলেজগুলো থাকবে এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েটেড হবে। যাতে ওখানকার শিক্ষার কারিকুলাম সুষ্ঠুভাবে হতে পারে, সেটা লক্ষ্য রাখা। যারা পড়াশোনা করবে তাদের সার্টিফিকেট যাতে পায় সে ব্যবস্থা করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাক, আামদের দেশের মানুষ যেন সেবা পায়। ইতোমধ্যে চিকিৎসক নার্স আমরা সবই নিয়োগ দিচ্ছি। তারপরও দুঃখজনক যে আমাদের উপজেলায় চিকিৎসক থাকে না। কোথাও একজন থাকে তো, যেখানে দশজন থাকার কথা। প্রত্যেকটি হাসপাতাল ৩১ বেড থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করে দিচ্ছি। বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলো একশ শয্যায় ছিলো, প্রথম যখন ক্ষমতায় আসি তখন ২৫০ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিচ্ছি।
উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকার অনীহার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এমন এমন জায়গা আছে, যেখানে হয়ত অপারেশন থিয়েটার পড়ে আছে, কিন্তু অপারেশন করার মতো চিকিৎসক নেই সার্জন নেই, অ্যানেসথেশিস্ট নেই, নার্স নেই এরকম একটা অবস্থা। আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাব, আর সেগুলো অবহেলিত থাকবে এটা কিন্তু হতে পারে না। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মোতাবেক আমরা মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি। কাজেই মানুষের সেবা দেওয়াটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমি আশা করি, এ সেবাটা মানুষ পাবে।
‘যেহেতু দক্ষিণাঞ্চল খুবই অবহেলিত, আর ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ অবহেলিত থাকবে না। এটা এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে তো যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।
এছাড়াও বরিশাল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ভবিষ্যতে গভীর সমুদ্র বন্দর করা হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জি.এম সালেহ উদ্দিন। এরপর উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ ও গৃহীত কর্মসূচি তুলে ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজপ্রান্তে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রিতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর দয়াগঞ্জ ও ধলপুর সিটি কলোনিতে হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য নির্মিত ৪টি আধুনিক ভবনের (৩৪৫টি ফ্ল্যাট) উদ্বোধন করেন।