স্মৃতি খানম : হাতে লেখা সনদ প্রদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ঐতিহ্য। তবে তা অচিরেই হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে হাতে লেখা সনদের কাজ করেন চারজন। ১৯৭৯ সালে এ পদে সর্বশেষ নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। এরপর কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় এ পদে নিয়োগ দেয়নি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হাতে লেখা সনদ অচিরেই বিলীন হতে পারে ধারণা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ লেখক হিসেবে ১৯৭৪ সালে নিয়োগ পাওয়া খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জানান, শিক্ষিত ৪৪ বছরে ধরে লিখে যাচ্ছেন লাখো শিক্ষার্থীর অনার্স সনদ তিনি আশংকা করছেন দ্রুতই হারিয়ে যাবে এই পেশা। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সনদ লেখক হিসাবে কাজ করছি । স্কুল জীবনে বাঁশের কঞ্চি কেটে কলমের মতো করে কাগজে লিখতাম । লেখা যেহেতু সুন্দর তখন আমি পোস্টার লিখতাম । তখন মেম্বার চেয়ারম্যানরা যাদের লেখা সুন্দর তাদের খুঁজে বের করে তাদেরকে দিয়ে পোস্টার লিখিয়ে নির্বাচনী কাজ চালাতেন । ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের কারনে গ্রাম ছড়ে ঢাকায় চলে আসি । ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের কথা মানুষ হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে । তখন বুঝতে পেরেছি অভাব কী। তখন আমরা ঢাকা চলে আসি। সুন্দর হাতের লেখার কারনে ঢাকায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে চাকরি পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তবে আমি লিখতে লিখতে এই পর্যায়ে এসেছি । সেজন্য আমার খুব গর্ববোধ, যে আমার নিজের না হোক । আমি দেশের ভালো ভালো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ লিখছি ।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সনদ লেখার কাজ করেন চারজন । এই পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিলো ১৯৭৯ সালে।
এখন মানুষ কম্পিউটারে প্রযুক্তির কারনে এগিয়ে যাচ্ছে । অনেক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারে দিয়ে লেখানো হচ্ছে । প্রযুক্তি এসে এই স্থান দখল করেছে ফলে আমাদের হাতের লেখার অবমূল্যায়ন হচ্ছে । এখন আর সুন্দর লেখার জন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না । ক্যালিগ্রাফির কোন পদ তৈরি হচ্ছে না। তারমানে আমারা বিলীন হয়ে যাচ্ছি । সূত্র : বিবিসি বাংলা