আরিফুর রহমান তুহিন : নিপীড়িত রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য অবস্থান করতে হবে জানিয়ে জার্মানি গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল বলেছেন, বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না দিয়ে এককভাবে তাদেরকে অধিকার বঞ্চিত করেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে পূর্ব ও পশ্চিম শরণার্থী সঙ্কট বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। সঞ্চালনায় ছিলেন ডয়েচে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে তারা এই আলোচনায় মিলিত হন। ইনেস পোল বলেন, তিনি যখন রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন তখন তিনি লক্ষ্য করেছেন, শরণার্থীদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন তারা অল্প সময়ের জন্য এখানে অবস্থান করবেন। রোহিঙ্গারাও খুব দ্রুত মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদেরকে এখানে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করতে হবে। বাংলাদেশকে এটা মেনে নেওয়া উচিত। তাই বিশাল সংখ্যক নিপীড়িত শরনার্থীদের এদেশের মানুষের সাথে মিশার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, বাস্তচ্যূত মিয়ানমারের নাগরিকদের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে শিক্ষার সুযোগ দিলে তারা প্রতিভাবান হয়ে উঠবে। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে এই সমাজের অংশ হওয়ার একটা সুযোগ তাদের পাওয়া উচিত, কাজের সুযোগ পাওয়া উচিত এবং বাংলাদেশে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারার সুযোগ পাওয়া উচিত। তাদের দেশও একই সমস্যার সম্মুখিন হয়েছে। তাদের সরকার শরণার্থীদের গ্রহণ করেছে।
আলোচনায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, এটা যতটা সহজভাবে বলা হচ্ছে ততটাই কঠিন। বাংলাদেশ এখনো জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাছাড়া যে সকল মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে তাদেরকে মূলত অত্যাচারের মাধ্যমে দেশ ত্যাগ করাতে বাধ্য করেছে। মিয়ানমারের জেনারেলরা এবং অং সাং সুচি তাদেরকে জাতিগত নিধনের মাধ্যমে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালি’ হিসেবে বর্ণনা করতে চায়। রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ তথ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও ১৫ বছরের উপরের কাউকে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটাও সংরক্ষণ করতে হবে।
ভূগোল আর অর্থনীতির মানচিত্রে বাংলাদেশ আর জার্মানির দূরত্ব অনেক, কিন্তু শরণার্থী সঙ্কট দুই মহাদেশের এ দুই দেশকে একই ধরনের সমস্যার সামনে নিয়ে এসেছে। ভাগ্য বদলের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপমুখী জন¯্রােত চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশকে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করতে হচ্ছে। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন/রেজাউল আহসান