পাট কিনতে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চায় বিজেএমসি
সোহেল রহমান : চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর জন্য কাঁচা পাট কিনতে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ‘বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন’ (বিজেএমসি)। অতি সম্প্রতি সংস্থাটির পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, কাঁচা পাটের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। আর মিল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। মূলত: এ প্রেক্ষিতেই বিজেএমসি পাট কেনার অর্থ চেয়েছে।
প্রসঙ্গত: এক বছর আগে বিজেএমসি-কে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল সরকার। বিজেএমসি-কে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং মিলগুলোতে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি বজায় রাখতে এ বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এ অর্থ ছাড় করা হয়নি।
এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে সম্প্রতি বিজেএমসি-কে ৩ শতাংশ সুদে ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার, যা ২০ বছরে পরিশোধযোগ্য। তিন মাস আগে একই খাতে ১০ কোটি টাকা এবং গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজেএমসি-কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বাবদ গত ৯ মাসে মোট ১২০ কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার।
বিজেএমসি’র চিঠিতে বলা হয়েছে, মিলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাট মজুদ করা হয় না। শ্রমিকদের অলস মজুরি পরিশোধেই বরাদ্দ শেষ হয়ে যায়। এদিকে পাটের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। অতীতে বড় বড় ঋণ নেওয়ায় চলতি মৌসুমে মিলগুলোর পক্ষে পাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আর মৌসুমে পাট কিনতে না পারলে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। গত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজেএমসি’র কাছ পাটকলগুলোর মোট ৪৯৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে নতুন কাঁচা পাট কেনা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পাট কিনতে ও মিলের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে ১০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে কাঁচা পাটের মজুদ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪১ কুইন্টাল। এ পরিমাণ কাঁচা পাট দিয়ে মিলগুলো সর্বোচ্চ ১৫ দিন চালু রাখা যাবে। মান ও গ্রেড ভেদে পাট মজুদ না থাকায় ইতোমধ্যেই কয়েকটি মিলের উৎপাদন কমে গেছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মিলগুলোর দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল প্রায় ৮৭১ মেট্রিক টন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এটি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৭ মেট্রিক টন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া মজুরিসহ বিজেএমসি’র বর্তমান দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত বিজেএমসি’র মোট বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিলো ৭৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা ৫৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে বিজেএমসি। যা এখনো পুরোপুরি পরিশোধ করেনি সংস্থাটি।
সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি)-এর আওতাধীন ২৬টি চালু পাটকল বা ইউনিটের নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এর পরিমাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিজেএমসি’র নীট লোকসান বেড়েছে ৯ কোটি টাকা।
বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ৮২টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়েছিল। তিনটি নন-জুট প্ল্যান্টসহ বর্তমানে সংস্থার আওতাধীন চালু কারখানার সংখ্যা ২৬টি। এগুলোর মধ্যে একটি নন জুট মিল ছাড়া বাকিগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এসব পাটকলে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৬৫ জন। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী, সালেহ্ বিপ্লব