আসছে নতুন রপ্তানি নীতি পোশাক শিল্পের মতো সুবিধা পাবে চামড়া খাত
ফয়সাল মেহেদী : রপ্তানিমুখী শিল্পকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন রপ্তানি নীতি চূড়ান্ত হচ্ছে। এতে রপ্তানির দ্বিতীয় শীর্ষ চামড়া খাত তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সুবিধা পাবে। নতুন রপ্তানি নীতি ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে । জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি সম্প্রসারণ, রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে সহজ শর্তে ঋণসহ নতুন নীতিতে রপ্তানি পণ্যে উৎসাহব্যঞ্জক সুবিধা প্রদানের জন্য মূল্য সংযোজন হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নতুন রপ্তানি নীতিতে চামড়া খাতের অনুকূলে প্রদত্ত সুবিধাসমূহ (ইডিএফের আকার, বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ‘ইন্টার বন্ড ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটিজ, অগ্নি ও বিল্ডিং সেফটি এবং কমপ্লায়েন্ট সংশ্লিষ্ট ইকুইপমেন্ট) তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সুবিধা পাবে।
খাত-ভিত্তিক সুবিধার বিষয়ে নতুন রপ্তানি নীতিতে চামড়া খাতের জন্য আরও বলা হয়েছে, চামড়া শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্যকরণ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে লিড টাইম কমানোর লক্ষ্যে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কমপ্লায়েন্ট পাদুকা ও চামড়াজাত শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট কারখানাসমূহকে সবুজ রঙ শ্রেণিভুক্তকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। রপ্তানি আয়ে অবদান রাখা ট্যানারিমালিক ও ট্যানারিবিহীন রপ্তানিকারকদের অপরিহার্য কেমিক্যালসমূহ আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তিসংগতভাবে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্জ্য পরিশোধনাগারের (ইটিপি) মাধ্যমে তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধন উপায়ে আমদানিকৃত চামড়া প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতি অনুযায়ী পুনঃরপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) উপদেষ্টা ও এপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক এম.এ. মাজেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, চামড়া খাতের জন্য এটা অনেক বড় সুখবর। সুযোগ-সুবিধা পেলে এ খাত ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। তিনি আরও বলেন, নানা করাণে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ও কমেছে। রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে এ খাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন ২০১৫-১৮ মেয়াদের রপ্তানি নীতির মেয়াদ শেষ হয়। নতুন রপ্তানি নীতি ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা। তবে রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ এখনও প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত আগের নীতি কার্যকর থাকবে।
বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, প্রস্তাবিত নতুন ‘রপ্তানি নীতি’ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা আরও ত্বরান্বিত করবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার পাশাপাশি চামড়া থেকে তৈরি জুতা, ব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, ওয়ালেট, বেল্ট, মানিব্যাগসহ চামড়ার তৈরি হস্তশিল্প পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩৮ কোটি ডলার। শেষ পর্যন্তÍ এর বিপরীতে আয় হয় ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় হয় ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় আয় হয় ১২.০৩ শতাংশ কম। এতিকে চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৬ কোটি ৮৯ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয় ২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ আয় ০.৩৬ শতাংশ কম। এ খাত থেকে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আয় হয়েছিল ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় হয়েছে ১৭.৪৬ শতাংশ কম। সম্পাদনা : মাহবুব আলম