আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
ম্যাকেঞ্জি এন্ড কোম্পানীর জরিপ বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকছে না পোশাক শিল্প, যাবে পশ্চিমা বলয়ে
স্বপ্না চক্রবর্তী : পরিবহন ব্যয় কমানোসহ দ্রুততম সময়ে ক্রেতার হাতে পোশাক পৌঁছানোর লক্ষ্যে তৈরি পোশাকের বাজার বাংলাদেশ তথা এশিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পশ্চিমা বিশ্বের ক্রেতারা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি এন্ড কোম্পানি পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা যায়। ফলে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে আর পোশাক কারখানা থাকবে না বলে আশংকা করছেন এই খাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই জরিপের ভিত্তিতে জানা যায়, ঘন ঘন ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে এশিয়ার পরিবর্তের নিজ নিজ দেশ কিংবা কাছাকাছি দেশ থেকে পণ্য ক্রয় করতে চান ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিজ দেশ কিংবা মেক্সিকো এবং ইউরোপের জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর বাইরে তুরস্ককে ক্রেতারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। জরিপে বলা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ বাড়তে পারে এ ধরনের বাণিজ্য। ইউরোপ ও আমেরিকার ২শ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের ওপর চালানো ওই জরিপে দেখা যায়, ১৮০ জনই নিজ দেশে উৎপাদন কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়াতে চান। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই এই ব্যবস্থাকে তাদের জন্য সুবিধানজক মনে করছেন।
‘পোশাকের উৎপাদন কি নিজ দেশেই ফেরত যাচ্ছে?’ শিরোনামের এই জরিপটি পরিচালনা করা হয় গত সেপ্টেম্বরে। পরে গত বৃহস্পতিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ম্যাকেঞ্জি। এসময় ম্যাকেঞ্জির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিজ দেশে উৎপাদন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানিকে আরও বেগবান করবে চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপ ও নতুন শুল্কারোপের হুমকি। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ ভাগ নির্বাহী মনে করেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আমদানি-রপ্তানির সূচকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আমদানি উৎস দেশ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ নির্বাহী যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। মেক্সিকো থেকে আমদানি সুবিধাজনক মনে করেন ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। আর ইউরোপের জন্য বড় আমদানির উৎস হিসেবে তুরস্কের নাম উঠে এসেছে।
জরিপে বলা হয়, এক সময় ফ্যাশন সাইকেল বা পণ্যের নকশা করার পর ক্রেতার স্টোরে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ছিল ৬ মাসের মতো। এখন তা ৬ সপ্তাহে নেমে এসেছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিতে সমস্যা প্রসঙ্গে নির্বাহীরা বলেন, এতে পরিবহন ব্যয় এবং সময় বেশি লাগে। বিষয়টি স্বীকার করেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। তিনি বলেন, এটা অবশ্যই সত্যি যে বাংলাদেশ বা এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি অনেক সময়সাপেক্ষ একটা বিষয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কাছে এত সময় কোথায়? তাই আমাদেরই এই সমস্যার সমাধানে উদযোগী হতে হবে। আমাদের নিজস্ব পোর্ট তৈরি, আমদানির্ভর কাঁচামাল বাদ দিয়ে নিজস্ব ফেব্রিক বা প্রোডাক্টের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিমালার পরিবর্তন ও পরিমার্জন অত্যান্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।
এদিকে, স্থানীয়ভাবে কিংবা নিজ দেশের কাছাকাছি পোশাক উৎপাদন করতে গেলে উৎপাদনের মূল খরচ কিছুটা বাড়লেও পরিবহন ব্যয় কমবে বলে উল্লেখ করা হয় ওই জরিপে। এর প্রেক্ষিতে দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কর্মী হিসেবে মানুষের বদলে রোবট ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে ম্যাকেঞ্জির ওই গবেষণায়। স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন, রোবটের ব্যবহার , থ্রি-ডি প্রিন্টিংসহ অন্যান্য সুবিধাগুলোর কারণে হয়তো একদিন উন্নত দেশগুলোকে এশিয়ার দেশগুলো থেকে পোশাক আমদানী করতে হবে না। তবে এটি সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। যেহেতু আমাদের এখানে এই শিল্প একদিন গড়ে ওঠেনি সেহেতু হুট করেই বন্ধ হবে না বলেই আমরা মনে করছি। তবুও আমাদের অবশ্যই অন্যান্য শিল্পোন্নয়ের দিকে নজর দিতে হবে এখন থেকেই। এতে করে পোশাক শিল্প বাংলাদেশ থেকে চলে গেলেও অন্যান্য শিল্পের রপ্তানীকরণের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। সম্পাদনা : মাহবুব আলম