ঋণ দিতে ভালো উদ্যোক্তা খুঁজছি
রমজান আলী : কৃষিখাতে ঋণ দেয়ার জন্যে বসে আছে কৃষি ব্যাংক, কিন্তু ভালো উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই এ কথা জানালেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল। এ প্রতিবেদকে তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে পাল্টাচ্ছে কৃষি। কৃষির আধুনিকায়ন হচ্ছে। উন্নত বিশে^র বিভিন্ন রাষ্ট্রে কৃষি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকরা কৃষি ইন্ডাস্ট্রি করতে চাইলে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে। ভালো উদ্যোক্তা খুঁজছি, ঋণ দেয়ার জন্য আমরা বসে আছি। কিন্তু ভাল লোক খুঁজে পাচ্ছি না। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : চলতি অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা কত ?
মোহাম্মদ ইসমাইল : গত অর্থবছরে (২০১৭-২০১৮) ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। চলতি অর্থবছরে ১২৫০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষিতে ৯ শতাংশ ও ইন্ডাস্ট্রি লোনে ১১ শতাংশ ইন্টারেস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষিজাতীয় সব ধরনের ঋণ দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া গরু পালনের ওপর বিশেষ নজর রয়েছে। গরু পালনে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। গোটা দেশে কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৩১টি শাখা রয়েছে। প্রত্যেক শাখা প্রধানদের ঋণ বিতরণের ক্ষমতা দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেককে তাদের হিস্যা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঋণ দেওয়া এবং নেওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। ব্যাড লোনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যাংকটির ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকায় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলাপি ঋণের হার ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে গত অর্থবছরে ২১ দশমিক নেমে এসেছে। খেলাপি ঋণ কমায় বেড়েছে কৃষি ব্যাংকের আয়।
প্রশ্ন : কৃষিতে উদ্যোক্তা বাড়াতে কী ভূমিকা নিয়েছেন?
মোহাম্মদ ইসমাইল : মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য বেশি করে গরুর মাংসের খামার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশে গরুর মাংসের চাহিদা প্রচুর। গরুর মাংস রফতানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারি। এছাড়াও দেশের মাংসের চাহিদা পূরণ করার জন্য নতুন খামারীদের সহজ শর্তে ও স্বল্প মুনাফায় ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খামার তৈরি করে গৃহিণীরাও কাজ করতে পারবে। গরুর খামার তৈরি করতে পারলে আমাদের অন্য দেশ থেকে গরু আমদানি করা লাগবে না। এছাড়া গৃহিণীদের সব ধরনের ঋণ দেয়া হবে যাতে বাড়ি বসে হাঁস-মুরগি পালনসহ সব কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে কৃষি ব্যাংক কিভাবে কাজ করছে?
মোহাম্মদ ইসমাইল : গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংক বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি ব্যাংকে ৩৫ লাখেরও বেশি ঋণগ্রহিতা রয়েছে। শুধুমাত্র ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন ৭০ লাখ ডিপোজিটর। কৃষক ও কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের ব্যাংকিং কর্মকা- এখানে রয়েছে। উন্নততর কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পে অর্থায়ন, কাঁচামাল আমদানি, পণ্য রফতানি, রেমিট্যান্স সংগ্রহ সবই করছে। এছাড়াও কৃষি নির্ভর এসএমই খাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করছি। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি ব্যাংক অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রশ্ন : ব্যাংকের সার্বিক উন্নতির বিষয়ে বলবেন কি ?
মোহাম্মদ ইসমাইল : লোকসান কমিয়ে আনা, খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সূচকে উন্নতির মাধ্যমে গত অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকটি। বর্তমানে যে ঋণখেলাপি রয়েছে, তা অর্থবছরে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করব। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী ও সালেহ্ বিপ্লব