ইসলামভীতি মোকাবেলার কার্যকরী উপায়
মোহাম্মদ জমির : কারো কারো মতে ইসলামভীতি এখন আর কোনো স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তির প্রকাশ নয়। উল্টো ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে বিষয়টি চরম ডানপন্থী গোষ্ঠি ও মিত্রদের মতাদর্শে পরিণত হয়েছে।
ইসলাম ও মুসলিমদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার এমন নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা বিগত পাঁচ বছরে আরো খারাপ হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা-, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপের অভিবাসন সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামবিরোধী প্রচারণাকে জোরালো করছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর ভয়ঙ্কর কিছু কার্যকলাপের ফলে ইসলামবিরোধী প্রবণতাকে আরো বাজে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ইসলামভীতিতে বিভিন্ন মাত্রা যোগ করছে।
নাইন ইলেভেনের পর আমেরিকা ও বহির্বিশ্বে অনেক অমুসলিমকে হামলার শিকার হতে হয়েছে। মুসলিম অবয়ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এজন্য দায়ী।
আলাদা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মাত্রা তৈরির এই পদ্ধতিটি সাম্প্রতিক বছরে গোটা বিশ্বে ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণা, অপরাধ ও বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে। এই দুর্ভাগ্যজনক বিকাশের কারণে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠি, নিকৃষ্ট ও বর্বর হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বের অনেক অংশে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব এতোটাই প্রকট যে, তা উপড়ে ফেলা কঠিন। কোনো ঘটনায় মুসলিমরা জড়িত থাকলে এই মনোভাব আরো দৃঢ় হচ্ছে। সেই সাথে চরম ডানপন্থীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ইসলামবিদ্বেষকে কাজে লাগাচ্ছেন।
এমন বাস্তবতায়, ইসলামভীতিকে সাধারণভাবে মুসলিম ও ইসলামভীতি হিসাবে না দেখে, সামগ্রিকভাবে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। জাতিগত বৈষম্য নির্মূলে জাতিসংঘ কনভেনশন ও ডারবান ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
যেহেতু মুসলিমরা কোন জাতি নয়, তাই জাতিগত বিদ্বেষ মোকাবেলায় গৃহীত আইনগুলো ইসলামভীতি বা মুসলিমবিদ্বেষকে প্রশমিত করতে যথেষ্ট নয়। ১৯৯৭ সালের আমস্টারডাম চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা গ্রহণ করে। বিভিন্ন চুক্তি, ঘোষণা ও প্রটোকলসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘও।
দুর্ভাগ্যজনক হলো, এসব আইন ও পদক্ষেপ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আইন ও নীতিমালায় সংযুক্ত থাকলেও, বর্ণবাদের আদলে বেড়ে উঠতে থাকা ইসলামভীতি ও নেতিবাচক মনোভাবকে প্রশমিত করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। উল্টো ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়েই চলছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠি। যেখানে বহু সংস্কৃতির সমাজ গঠন প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়েছিলো।
এই বিকাশমান বাস্তবতায় ইসলামভীতিসহ সব ধরণের বর্ণবাদ মোকাবেলা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় আইন ও রাজনৈতিক উভয় পর্যায়ে আগাম সংস্কারে দৃষ্টি দিয়েছে বাংলাদেশ।
এ লক্ষ্যে বহু-অংশীদারের সংলাপ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামভীতি বিশ্লেষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর এসব পদক্ষেপ গোটা বিশ্বের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক, তথ্য অধিকার ও সুশাসন বিষয়ক বিশ্লেষক। মূল ইংরেজি থেকে অনুদিত এবং সংক্ষেপিত। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব