‘তোমার হাসু আর আলসেখানায় থাকে না মা’
শোভন দত্ত : এ ডটার’স টেল’ প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে এমন একজন মানুষকে নিয়ে একধারারে একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতির কন্যা। কিন্তু এসব বাইরেও তিনি একজন মমতাময়ী মা, আদর্শ স্ত্রী এবং সর্বোপরী যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। প্রশাসন পরিচালনায় ইস্পাত দৃঢ় কাঠিন্যকে ভেদ করে যিনি একজন মানবিক মানুষ। যিনি টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যানগাড়িতে ঘুরে বেড়ান, নাতনিদের চুলে বেনী করে দেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হুল্লোড় করেন, ছেলের জন্মদিনে বা সুযোগ পেলেই রান্না করেন, পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন আর সহায় হয়ে পাশে দাঁড়ান দুস্থ মানুষের। বিডি নিউজ, বাংলা নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব মানবিক দিকগুলো এবার বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিপলু খান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে।
প্রামাণ্যচিত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছোট বেলায় তিনি কিছুটা ‘অগোছালো প্রকৃতির’ ছিলেন। নিজের কক্ষে নিবিষ্ট থেকে গান শুনতে আর বই পড়তেই ভালো লাগত তার। এর বিপরীতে ছোট বোন শেখ রেহানা মা ফজিলাতুন নেসা মুজিবের মতো সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তী ছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ রেহানা বলেন, আপার রুমের নাম ছিল আলসেখানা। নিজের রুমে নিজের মতো থাকতেন। প্রামাণ্যচিত্রের শেষে এই সাধারণ শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার প্রসঙ্গও উঠে আসে শেখ রেহানার জবানিতে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রথম ১৯৫২ সালে ঢাকায় আসলাম। নৌকায় করে আসছিলাম ঢাকায়। তিন মাল্লার নৌকা। নৌকার ভেতরে রান্না হত, নৌকার ভেতরে থাকা যেত। বড় থাকায় আমরা দৌড়াদৌড়িও করতে পারতাম। শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে টুঙ্গিপাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান। গ্রামে ঘুরতাম, ফিরতাম। খালে ঝাঁপ দিয়ে বেড়াতাম। রাজনীতি থেকে অবসরে গেলে আবার টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে ফেরার ইচ্ছার কথাও প্রামাণ্যচিত্রে বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
প্রামাণ্যচিত্রে আইয়ুব আমলে ছোটবেলার পুতুল পোড়ানোর মনোকষ্ট শেখ হাসিনার জবানিতেই উঠে আসে।
তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব সামরিক শাসন জারি করলে আমাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমাদের সব জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলা হয়। আমার পুতুল খেলার জিনিস পুড়িয়ে ফেলে ওরা। মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।
প্রামাণ্যচিত্রে শেখ রেহানার জবানিতে শেখ হাসিনার উপর ২০০৪ সালে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তুলে ধরা হয়। শেখ রেহানা জানান, সেদিন তার বাসায় অতিথি এসেছিল। তাদের জন্য আতিথেয়তার আয়োজনের মধ্যে টেলিভিশনে ওই খবর দেখেন তিনি। ‘প্রথমে শুনি আপা নাই। একবার এক রকম খবর শুনি। পরে দেখি আপা গাড়িতে। তার পুরো শরীরেও রক্ত।’
১৯৭৫ সালের ১৪ অগাস্ট রাতে ইউরোপে ‘ক্যান্ডেল লাইট’ ডিনারে উল্লাসে মেতে থাকলেও পরদিন বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারানোর খবরে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা।
রেহানা বলেন, ‘আমাদের প্রথম ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, আমরা খুব আমোদ-ফুর্তি করছিলাম। দুলাভাইয়ের ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছিল। তিনি ঠাট্টা করে বলছিলেন, ‘এত আনন্দ কইরো না, এর ফল ভালো হয় না’। তার কথাটাই মনে হয় ঠিক হয়ে গেছে।’
টেলিফোনে পরিবারের সবাইকে হত্যার খবর পেয়ে মুষড়ে পড়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই টেলিফোন আওয়াজের মতো কর্কশ সাউন্ড বোধহয় আর নাই। সেই আওয়াজ এখনও যেন মনে বাজে।
গণভবনে শেখ হাসিনার রান্নার ভিডিও দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রামাণ্যচিত্রে নিজের রান্না শেখার কাহিনীও শোনান প্রধানমন্ত্রী।