সন্তানের একটু আনন্দের জন্যে
সালেহ্ বিপ্লব : এ ঘটনা জাপানের। ছোট্ট মেয়ে মেগুমি তার মা আসাকো’র কাছে ঘুরেফিরেই জানতে চাইতো, ‘আমার বাবা কোথায়?’ বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ ঘটে, মেগুমি তখন নেহায়েতই শিশু। আসাকো ভেবেছিলেন, বাবার অনুপস্থিতি বোধহয় মেয়ের জীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ হয়, বাবার না থাকা প্রচ- প্রভাব ফেলে মেগুমির জীবনে। তাই আসাকো বাধ্য হয়ে সুকৌশলে একজন বাবার আবির্ভাব ঘটান, মেগুমি কখনো বুঝতেও পারেনি, এই বাবা আসলে ভাড়া করা বাবা। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
ছোটবেলা থেকেই মেগুমি জানতো, বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। যখন সে স্কুলে যেতে শুরু করলো, এটি একটি বড়ো সমস্যা হিসেবে দেখা দিলো। আর বিষয়টি বুঝতে তার মায়ের কিছুটা সময় লেগে যায়। মেয়ের বয়স যখন ১০, তখন আসাকো টের পান; মিগুমির আচরণে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। সে বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকে, কোনো কিছুতেই আগ্রহ দেখায় না। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আসাকো জানতে পারেন, স্কুলে সহপাঠিদের নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে মিগুমিকে। জাপানে এমনিতেও সিঙ্গেল প্যারেন্টকে ভালো চোখে দেখা হয় না। বাবা না থাকায় সহপাঠিরা মিগুমির সাথে মিশতে চাইতো না। দিনে দিনে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছিলো ছোট্ট মেয়েটি। তার মনে হচ্ছিলো, তার কারণেই বোধহয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটেছে। স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানার পর সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন আসাকো। টিচারদের সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু তারা কোনো পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারলেন না। এমন এক অস্থির সময়ে আসাকোর মনে পড়ে, তাদের দেশে ‘আত্মীয়’ ভাড়া দেয়ার এজেন্সি আছে। তেমন একটি এজেন্সি থেকে আসাকো ভাড়া করলেন তাকাশি নামের এক ভদ্রলোককে, যিনি ভাড়াটে আত্মীয় হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ভালো মানুষ। এরপর আসাকো তার মেয়ে মেগুমিকে জানালেন, তার বাবা আরেকটি সংসার পেতেছেন। তবে তিনি চান মেয়ের সাথে দেখা করতে, যোগাযোগ রাখতে। এরপর তাশাকি এলেন মেগুমির কাছে, ইয়ামাদা নাম নিয়ে। অভিনয়ে পারঙ্গম হলেও নকল স্বামী ও বাবা সাজার কাজটা খুব একটা সহজ ছিলো ছিলো না। তাকাশি বারবার কথা বললেন মেগুমির মা আসাকোর সাথ। আসাকো তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিলেন, যেগুরো তাকাশিকে সাহায্য করলো মেগুমির বাবা হয়ে ওঠার কাজে। হলিউডের দুটি ছবি দেখে স্বামী ও বাবা চরিত্র রূপায়নের জন্যে নিজেকে তৈরি করলেন তাকাশি। প্রথম দেখার পর থেকে এখন মাসে কয়েকবার দেখা হয় তাদের। তিনজন মিলে বাইরে যান, সময় কাটান। অবশ্য এই কাজের জন্য প্রতি সাক্ষাতে তাকাশিকে ৯০ ডলার করে দিতে হয়। আসাকো ভালো চাকরি করেন, তবুও এই টাকাটা যোগাড়ের জন্য তাকে এখন সঞ্চয়ী হতে হয়েছে। টাকার অংক যতো বড়োই হোক, আসাকোর জন্যে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, সন্তানের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে পেরেছেন। মিগুমি এখন অনেক আনন্দে দিন কাটাচ্ছে, তার মনে থাকা কষ্ট-অভিমানের সব মেঘ যেনো বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। তারপরও থেকে গেছে শংকা। এই মিথ্যে যদি ধরা পড়ে যায়! মিগুমি যেদিন জানবে, তাকাশি তার বাবা নন, কী হবে সেদিন? এই শংকা নিয়ে দিন যাচ্ছে, তবুও নিজেকে নিজেই সান্ত¡না দেন আসাকো। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার অবস্থা পৃথিবীতে প্রথম না, আরো কতো মা আরো বড়ো বড়ো মিথ্যার ঝুঁকি হয়তো নিয়েছেন, সন্তানকে একটু খুশি করার জন্য। হয়তো মেগুমি সেটা বুঝতে পারবে।” সম্পাদনা : ইকবাল খান