বিশ্বজিৎ দত্ত : ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে করের ঘাটতি হয়েছে ১১হাজার ৪শ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের বছর হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কমে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। কারণ মোট রাজস্বের প্রায় ৫৩ শতাংশ আসে ঠিকাদার ও উন্নয়ন প্রকল্পের উৎসকর থেকে। এ কারণে আগামী ডিসেম্বরে বাজেট ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে সরকার। রাজস্ব আয়ের এই চিত্রের সংগে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলোও নাজুক হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ৩ মাস যাবত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বেড়ে গেছে সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। আমদানি ব্যয় গত অর্থবছর পর্যন্ত বেড়ে এখন কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগেও চলছে মন্দা। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাচ্ছে, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, বাড়িয়ে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতির চাপ।
বাজারে টাকার প্রবাহ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেড়েছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশে। অর্থাৎ বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু এই টাকার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ছে না। বাড়ছে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। ফলে সরকার ঋণ নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সংশ্লিষ্ট কাজে খরচ করছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কম বলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকারের চলতি হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৪২৬ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৩৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এই ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে হয়েছে ৯৭৮ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ দুই মাসের গড় হিসাবে বাড়লেও আগস্টে কমে গেছে। গত অর্থবছরের আগস্টে রেমিটেন্স বেড়েছিল ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আগস্টে কমেছে শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের দুই মাসে গড় হিসাবে রফতানি বাড়লে আগস্টে কমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে রফতানি আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
শিল্প খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৬৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিতরণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ শিল্প খাতেও মেয়াদি ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান