সাক্ষাৎকারে ড. মো. সবুর খান প্রফেশনালিজম ডেভেলপ না করায় ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
সোহেল রহমান : ‘সময়ের সঙ্গে দেশে কম্পিউটার তথা প্রযুক্তি ব্যবহারের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যেটা এখনো হয়নি, সেটা হচ্ছেÑ এ খাতে আমাদের নিজস্ব প্রোডাক্ট, নিজস্ব জমিন বা নিজস্ব স্বকীয়তার অভাব রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে যেমন আমরা নিজেদের একটা আইডেনটিটি তুলে ধরতে পেরেছি, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এখনো সেই অবস্থানটা তৈরি করতে পারিনি। তবে ইয়াং জেনারেশনরা হয়তো এটা পারবে। একই সঙ্গে এ খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পেশাদারিত্বের অভাব। যারা প্রফেশনাল, তাদের যেভাবে এতে লেগে থাকা দরকার- সেটা হচ্ছে না। ফলে বাইরের লোক এটা নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রফেশনালিজমের ফ্লো ডেভেলপ না করায় সার্বিকভাবে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর প্রফেশনালিজম না থাকায় দেশে কোনো মার্কেট অ্যানালাইসিসও হচ্ছে না।’
দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ‘দৈনিক আমাদের অর্থনীতি’ সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ খাতের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা ড. মো. সবুর খান এসব কথা বলেন। গত রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোহেল রহমান।
ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘দেশের আইসিটি খাতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটাকে টেকসই করতে হলে এ খাত থেকে কমার্শিয়াল রেভিনিউ আয় বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া কিছু বিষয় আছে যেগুলো শুধু পয়সা খরচ করে হয় না। কম্পিউটার ও সফটওয়্যার হচ্ছে এমনি একটি প্রযুক্তি। আইসিটি খাতের উন্নয়ন করতে হলে সরকারের উচিত সঠিক ও মেধাবী তরুণদের চিহ্নিত করে তাদের নার্সিং করা এবং প্রয়োজনে তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ ও চাকরিতে পাঠানো দরকার। যদিও বাইরে যারা যাবে তাদের দুই-তৃতীয়াংশই হয়তো ফিরে আসবে না বলে ধরে নেয়া যায়; কিন্তু তারপরও বিভিন্ন সময়েই সরকারকে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ধরনের কাজে ভারত এগিয়ে আছে।’
গোড়ার দিকে দেশের আইসিটি ব্যবসা পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য তুলে ধরতে গিয়ে সবুর খান বলেন, ‘আমাদের সময়ের মার্কেট আর এখনকার মার্কেট আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আগে কম্পিটিশন ছিল না, মার্জিন প্রফিট ছিল বেশি, এক কন্টেইনার মাল আনলে ২/৩ মাস চলে যেত। এখন কম্পিটিশন বেড়েছে, মার্জিন প্রফিট কমেছে, কিন্তু বিক্রি বেড়েছে, মার্কেটও অনেক বড় হয়েছে। এখন এক কন্টেইনার মাল আনলে ফুঁ দিয়ে শেষ হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে যে কোন একটি উপজেলায়ও এখন ২/৩ কন্টেইনার মাল লাগে। এছাড়া একটা সময় এ খাতে ট্যাক্স হার ছিল অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। তবে ট্যাক্সটা বেশি হলেও তখন আরেকটা সুবিধা ছিল কম্পিউটারাইজেশনটা কিন্তু তখনো সেভাবে শুরু হয়নি। আর এখন এটা অনেক বড় ধরনের একটি এডভান্টেজ। এখন কম্পিউটার আমাদের পার্ট অব লাইফ। আমাদের সময়ে মোবাইল ফোনের কথা চিন্তাও করা যেত না। কম্পিউটার আমরা শুরু করেছিলাম ফ্লপি ডিস্ক দিয়ে। আর এখন সরকার এ খাত নিয়ে সচেতন, বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এ খাতের পরিবর্তনটা অবশ্যই ইতিবাচক।’
কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে নিজের জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার পড়ার বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ছিল। যখন ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন মনে হলো আমি কম্পিউটার বিষয়টা ভাল জানি, এতে আমার আগ্রহও আছে। সুতরাং তেমন বড় কিছু করতে না পারলেও এতে আমি টিকে যেতে পারবো। উদ্যোক্তা হিসেবে আমার একটা পরামর্শ হচ্ছে, একজন যেই কাজটা জানে, তার সেই কাজটাই করা উচিত। কারণ কোনো কারণে ব্যর্থ হলে সেই কাজটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য