রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আশঙ্কায় কক্সবাজারে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম এখনো বন্ধ
আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আশঙ্কায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে কক্সবাজার জেলার জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম। সাময়িক বন্ধ হলেও এখনো চালু হয়নি। কবে নাগাদ চালু হবে, তাও জানে না প্রশাসন। জেলায় জন্মনিবন্ধন ও চারিত্রিক সনদ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে এসব সেবা চালু না থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়াসহ নানা ধরনের অসুবিধায় পড়ছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের কারণে জন্মনিবন্ধন সনদপত্র দেয়া বন্ধ না করে বরং জনপ্রতিনিধিরাই সচেতন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা ঢল নামে। এ পর্যন্ত এসেছে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পরিচয়ে জন্মসনদ তুলে নানা কাজে লাগাতে পারে এই আশঙ্কায় স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) জ্যোতির্ময় বর্মণ এক স্মারকমূলে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জন্মসনদ প্রদান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা জারি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা জেলার আটটি উপজেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার মেয়র বরাবরে পাঠানো হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় সার্ভারে কক্সবাজার জেলার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়।
কক্সবাজারের চারটি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা। কিছু জনপ্রতিনিধি ভোগান্তি রোধে বিকল্প প্রত্যয়নপত্র দিলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।
কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বলেন, জন্ম নিবন্ধন না দেয়ায় অনেকের বিয়ে আটকে আছে। কারণ কাজী অফিসে জন্ম নিবন্ধন ছাড়া বিয়ে হচ্ছে না। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঘাটে-ঘাটে আটকে যাচ্ছে মানুষ। তাঁর প্রশ্ন, রোহিঙ্গাদের জন্য কেন আমাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়ায় রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় অনেকে জমিজমা বেচাকেনা করতে পারছেন না। এ ছাড়া নতুন পাসপোর্ট পাওয়া, ভোটার হালনাগাদ, কাবিননামা নিবন্ধন, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে জন্মসনদ ছাড়া কাজ না হওয়ায় এসবও আটকে আছে।
রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জনগণের যে কি পরিমাণ দুর্ভোগ হচ্ছে, সেটা দূর থেকে উপলব্দি করার সুযোগ নেই।
বহিরাগম বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উখিয়া-টেকনাফের দায়িত্বে থাকা) আবু মোহাম্মদ নোমান জাকির হোসেন বলেন, গত ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে উখিয়া ও টেকনাফে ১২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। এটি করছে বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি,আনসার এবং ইউএনএইচসিআর এর কর্মীরা। তবে শিগগিরই এই কার্যক্রম পুনরায় চালুর আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপরে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই চালু করার চেষ্টা চলছে’। সম্পাদনা : ইকবাল খান