হাইকোর্টের নির্দেশে আজ ঢাকা ছাড়ছে অ্যাকর্ড
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ফলে ১ হাজার ১০০ জন নিহত হবার পর ঢাকায় কাজ শুরু করেছিলো আন্তর্জাতিক পরিদর্শক সংস্থা অ্যাকোর্ড। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে শক্রবারের মধ্যে ঢাকা ত্যাগ কছে সংস্থাটি। এর পূর্বে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অ্যাকর্ড ফর ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটিকে নিজেদের ঢাকা কার্যালয় বন্ধ করতে হবে। গার্ডিয়ান
অ্যাকর্ডকে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে এই উদ্যোগের আওতায় থাকা ১ হাজার ৪৫০টি কারখানার নিরাপত্তা অবস্থা এখনও উন্নত করা প্রয়োজন। এর মধ্যে অর্ধেকেরই পর্যাপ্ত ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম নেই। বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে থেকে এসপ্রিট, এইচঅ্যান্ড এম এবং প্রিমার্ক এর মতো বিখ্যাত সব ব্র্যান্ড নিজেদের পণ্য বানিয়ে থাকে। এরমধ্যে এসপ্রিট এবং এইচ এ্যান্ড এম উভয়েই মনে করছে বাংলাদেশ থেকে অ্যাকর্ডকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অবিবেচনাপ্রসূত। বাংলাদেশি সরবারহকারীদের লেখা এক চিঠিতে এসপ্রিট লিখেছে, ‘এর ফলে আমাদের কাজ সহজ হওয়ার পরিবর্তে আরো কঠিন হবে।’
ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যদি ঝুঁকি নিয়ে অ্যাকর্ডের ঢাকা অফিস বন্ধকরে দেয়, তবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখিন হবে।’ ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা কমপ্লেক্স ধ্বসের পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ক্রেতাদের হওয়া বড় দুটি সমঝোতা স্বারকের একটি অ্যাকর্ড। এ ঘটনায় ১ হাজার ১১৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এটি বিশে^র বৃহত্তম কারখানা দূর্ঘটনা বলে চিহ্নিত। শ্রম সংগঠনগুলো এক গণ শিল্প হত্যাকা- বলে অভিহিত করেছে। আরেকটি সমঝোতা অ্যালিয়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কঅর সেফটির পাশাপাশি অ্যাকর্ড গত ৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার ৩০০ গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছে। এ সময়ে তারা ১ লাখেরও বেশি নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করেছে।
গবেষণা ফোরাম ‘নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্ট্রেন সেন্টারের’ তথ্য মতে, এই ৫ বছরে বাংলাদেশে প্রতিবছর কারখানায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ৫ বছরে ৭১ থেকে ১৭তে নেমে এসেছে। যদিও এই ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের শিল্পের অর্ধেক কারখানাকেই এখনও পরিদর্শনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দুই নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকের ৫ বছরের প্রাথমিক মেয়াদ এ বছর শেষ হচ্ছে। অ্যাকর্ড তা ২০২১ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধিতে আলোচনা চালিয়েছিলো। তবে হাইকোর্ট নভেম্বর নাগাদই তা শেষ করার নির্দেশ দেন। আদালত জানিয়েছেন, তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সরকারি নির্দেশনা মানছে না।
অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েস জানিয়েছেন, তারা আশা করেছিলেন, সরকার হাইকোর্টকে মেয়াদ বাড়াতে অনুরোধ করবে। তবে সরকার তা না করায় তারা হতাশ। তবে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হলেও তারা আন্তর্জাতিক প্রকৌশল কোম্পানীগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে পরিদর্শক প্রেরণ করবেন। কিন্তু এখনই তারা সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় তা আরো সময় নস্ট করবে। সরকার বলছে দেশের কারখানাগুলো, তাদের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন এবং কম্বোডিয়ার চাইতে নিরাপদ। এ বছরের শুরুতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমরা খুবই আত্মমর্যাদাশীল জাতি। আমাদের আর অ্যাকর্ড জোটের কোনই প্রয়োজন নেই।’ তবে বেশ কিছু মেজর ব্র্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত নন। শ্রম অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, সরকারের দেশের সব কারখানা পরিদর্শনের সক্ষমতা নেই। অনেক গার্মেন্টস মালিক সংসদের সদস্য পর্যন্ত রয়েছেন। যেহেতু দেশের রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে এই খাত থেকে, তাই নিরাপত্তার বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। সম্পাদনা : ইকবাল খান