তাবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২ শতাধিক
মো: মিলটন খন্দকার, গাজীপুর : টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের মওলানা সাদ ও মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের মধ্যে জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে একজন নিহত ও উভয়পক্ষের কমপক্ষে দুই’শ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে নিহত ইসমাইল মন্ডল(৭০) মুন্সীগঞ্জের মিলিয়াপাড়া গ্রামের খলিল মন্ডলের ছেলে ও মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারী ছিলো। সংঘর্ষের সময় ইজতেমা মাঠে থাকা বেশ কিছু প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। আহতদের মধ্যে ২০জনকে ঢাকা মেডিকেল এবং অন্যদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানের পাশে চা বিক্রেতা রাকিব জানান, জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা বুধবার রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের ভেতরে অবস্থান নেয়। তারা শুক্রবার সকালে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের সব গেট বন্ধ করে দেয়। বাহিরের সাধারণ মুসুল্লিদেরও তারা ইজতেমা মাঠে জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেয়নি। শনিবার ফজরের নামাজের আগে থেকে মাওলানা সাদপন্থী মুসুল্লিরা ইজতেমা মাঠের চারদিকে টঙ্গী বাটা গেট ও কামাড়পাড়া রোডে তজবিহ ও কিতাব হাতে অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ইজতেমা মাঠের ভেতর থেকে সাদপন্থী মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে সাদপন্থী মুসুল্লীরা জোবায়েরপন্থী মুসল্লিদের ওপর পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হয়।
সাদ পন্থী মুসুল্লীরা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সাদ অনুসারীরা বিশ্ব ইজতেমা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ৩০ নভেম্বর জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে ঢুকতে গেলে দেওবন্দ কওমিপন্থী মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা বাধা দেন।
অপরদিকে জোবায়ের কওমিপন্থীরা জানান, ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর তারা জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা শুনে সাদপন্থীরা ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে নিজ নিজ পক্ষের প্রতিনিধিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেকে নিয়ে নির্বাচনের আগে জোড় ইজতেমা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে উভয় পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। তারপরও সাদ অনুসারী কয়েক হাজার তাবলিগ মুসল্লি শনিবার ভোরে জোড় ইজতেমা করার জন্য ময়দানে ঢোকার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন টঙ্গী (পূর্ব) থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, সা’দ পন্থীরা তাদের পূর্ব ঘোষিত ৩০নভেম্বর থেকে ৫দিন ব্যাপী জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে দুইদিন ধরে টঙ্গী বিশ্বইজতেমা ময়দানের আশে পাশে জমায়েত হতে শুরু করেন। অপরদিকে ইজতেমা ময়দানের ভেতরে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রসহ জোবায়ের পন্থী তাবলীগের মুসুল্লীরা অবস্থান করছিলেন। শনিবার ভোরে জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা মুসুল্লীরা ময়দানে ঢুকতে চাইলে অপরপক্ষের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এনিয়ে ওই এলাকায় মুসুল্লীদের মাঝে উত্তেজনা শুরু হয়। একপর্যায়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ময়দানের বাইরে থাকা মুসুল্লীরা ফটকের তালা ভেঙ্গে এবং সীমানা প্রচীর টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং উভয়পক্ষের মুসুল্লীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। তাদের ইটপাটকেলে ও লাঠির আঘাতে উভয়পক্ষের শতাধিক মুসুল্লী আহত হয়েছেন। পরে অতিরিক্তি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আহতদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সা’দ পন্থীর অন্যতম মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম জানান, মো. ইসমাইল মন্ডলের লাশ দুপুর পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানেই ছিল। তিনি তাদেরই অনুসারি এক মুসুল্লী ছিলেন।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ হোসেন জানান, ওই ঘটনায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই শতাধিক মুসুল্লী এ হাসপাতালে এসেছে এবং শতাধিক মুসুল্লীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহত মুসুল্লীদের মধ্যে ২০জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মেট্রোপলিটনের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান ঘটনাস্থল ও টঙ্গী হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান