অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলা জরুরি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার জরুরি : অধ্যাপক খসরু
সালেহ্ বিপ্লব : জীবনরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক খুবই বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তা হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে। কেউ কেউ ডোজের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন, আবার কেউ কেউ কোর্স শেষ করেন না। দুক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, শরীরে তৈরি হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এতে করে শরীরে আর কোন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। এমন প্রেক্ষাপটে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু। সূত্র : মেডিভয়েসবিডিডটকম।
অধ্যাপক খসরু বলেন, এক সময় মানুষ মারা যেতো অ্যান্টিবায়োটিক না থাকার কারণে। কিন্তু আগামীদিনে মানুষ মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতার কারণে। গত ২০ বছরে নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি। আগামী ১০ বছরও যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে মানুষকে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে আর কোন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। এই ভয়াবহ আশংকা থেকেই এটাকে মহাবিপর্যয় বলা হয়।
আর এই মহাবিপর্যয়ের এই ঝুঁকিতে আছে পৃথিবীর সকল মানুষই। শিশু, বৃদ্ধ, সার্জারি করা রোগী, ক্যান্সারের রোগী, নোংরা পরিবেশে বসবাসকারী বা কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে চিকিৎসার প্রধান উপায় হলো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন। এ ব্যাপারে সারাবিশ্বের গবেষণাগারগুলোতে খুবই স্থবিরতা বিরাজ করছে। হয়তো আগামী ৬ বা ৭ বছরের মধ্যে দু একটা সত্যিকারের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হবে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের হাতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে খুব সাবধানে ও বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করতে হবে। অনেকটা লুকোচুরি খেলার মতো করেই পুরানো অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে সুকৌশল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রয়োগ করে আমাদের আরো কিছুদিন ব্যাকটেরিয়াগুলোর সাথে লড়াই করে জিততে হবে।
আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইসিইউগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে প্রায়ই কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কোন অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়। এ অবস্থায় ডাক্তারদের অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না। এটা হয়তো বর্তমানে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হচ্ছে, কিন্তু আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে যাবে। সে কারণে এখনই খুব সাবধানতার সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা শুরু করতে হবে।
দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, আমাদের দেশে ২ লাখ ৩০ হাজার ওষুধের দোকান আছে। প্রতিদিন তারা যদি দুইজন লোকের কাছেও প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে, তাহলে তারা প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ মানুষকে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। এটা হলো বাংলাদেশের মাত্র এক দিনের চিত্র। এই ওষুধের দোকানগুলোকে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ঢাকাতেই যাচ্ছে না, আর ঢাকার বাইরে তো দূরের কথা। সেজন্যে আসলে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খাবে না, কারণ এটা হয়তো আমাকে বর্তমানে কিছু সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু আমার বাচ্চার ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ওষুধের দোকান খুলে রাখলেও সাধারণ মানুষ যদি নিজে থেকেই সতর্ক হয়ে যায়, তবেই শুধুমাত্র আমাদের মতো দেশে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। আবার যে দোকানদার অল্প কিছু মুনাফার জন্যে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করছে সে জানে না যে এটা তাকেও আগামীতে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। অতএব সমগ্র জাতিকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেছেন অধ্যাপক খসরু। তিনি বলেন, আমাদেরকেই দায়িত্বশীল ও যৌক্তিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অনেক সমস্যা আছে যেগুলো যথাযথ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্যে প্রতিবন্ধক। চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক লেখার সময় যদি রোগীকে এক মিনিট করে ভয়াবহতাটুকু ব্যাখ্যা করে দেয়, তাহলেই চিত্রটা এক বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে। জনগণকেও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। যখন প্রেসক্রিপশনে লেখা দেখি দিনে তিন বার, সেটা যে আটঘন্টা পর পর, সে বিষয়টা তো সবাইকেই জানতে হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদজুড়ে যে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে, হতে পারে সেটা পাঁচদিন, সাতদিন বা দশদিন, সেটাও তো জানতে হবে।