রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় কুড়িগ্রামে নিজ বাড়িতে দাফন সম্পন্ন বীর প্রতিক তারামন বিবি আর নেই
অনিরুদ্ধ রেজা, কুড়িগ্রাম : মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যে দুজন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়া হয়েছে তারামন বিবি তাদের একজন। তিনি শনিবার রাত দেড়টার দিকে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়ায় ৬১ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বীর প্রতীকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতি ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ চিরকাল তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি তারামন বিবির রুহর শান্তি ও মুক্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবির অসামান্য অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তারামন বিবি অস্ত্র হাতে নিয়ে যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার সেই অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী তার রুহের শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং তারামন বিবির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ মাঠে তাকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়। পরে ঐ মাঠেই দুপুর আড়াইটায় জানাজা শেষে এই বীর প্রতীককে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামে তার পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। এসময় উপস্থিত থেকে বীর প্রতীক তারামন বিবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীর বিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাজ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকু, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ নভেম্বর কুড়িগ্রামের রাজীবপুর থেকে ময়মনসিংহ সিএমএইচ (সেনা ক্যান্টমেন্ট হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে শারীরিক কিছুটা উন্নতি হলে ১ সপ্তাহ আগে তিনি রাজিবপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বীর প্রতীক তারামন বিবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বাড়িতেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। পরে রাত দেড়টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয় এবং তিনি শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান।
বীর প্রতীক তারামন বিবির পুত্র আবু তাহের জানান, আমার মায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। সরকার সব সময় আমার মায়ের ও পরিবারের পাশে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১নং সেক্টরের হয়ে তারামন বিবি মুক্তিবাহিনীদের রান্নাবান্না, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকবাহিনীদের খবরাখবর সংগ্রহ করা এবং সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য