আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
খেলাপিঋণ সাড়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা খেলাপিঋণ বৃদ্ধি ও আমানত কমে যাওয়ায় উভয় সঙ্কটে ব্যাংক খাত
সোহেল রহমান : একদিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও অন্যদিকে আমানত কমে যাওয়ায় উভয় সঙ্কটে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এটি বিতরণকৃত মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা (১০ দশমিক ৪১ শতাংশ)। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বড় ঋণ গ্রহীতারা তাদের পুনঃতফসিলকৃত ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না করায় এবং পুনর্গঠিত বৃহৎ ঋণগুলোর একটি অংশ পুনরায় খেলাপি হয়ে পড়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
অন্যদিকে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্যাংক খাতে আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এর বিপরীতে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণে দুই বছরে ব্যাংকগুলোকে ৭৭ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ধার করতে হয়েছে। জানা যায়, ৩০টিরও বেশি ব্যাংক এখন ধারে চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিআরআর’ (নগদ জমা) ও ‘এসএলআর’ (বিধিবদ্ধ সঞ্চিতির হার) জমা রাখতে পারছে না। মূলধন ভেঙে খাচ্ছে দশটি ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়ম ও বেপরোয়া ঋণ বিতরণের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ১ শতাংশ বাড়লেও গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এটি বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত পঞ্জিকা বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়ে। ফলে চলতি ডিসেম্বর শেষে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে ব্যাংক খাত সঙ্কটে পড়লে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা (গত জুন শেষে এর পরিমাণ ছিলো ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা), ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা (গত জুন শেষে এর পরিমাণ ছিলো ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা) এবং ৯টি বিদেশী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা (গত জুন শেষে এর পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ২৭১ কোটি টাকা)। গত তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ২টি বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়নি। বিশেয়াষিত ব্যাংক দুটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। সম্পাদনা : ইকবাল খান