আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৩
অস্থির পোশাক খাত, সংকট সমাধানে ঐক্যে শ্রমিক-মালিক-সরকার
স্বপ্না চক্রবর্তী : ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত বিভ্রান্তিতে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহলের উসকানিতে এমনটি ঘটছে বলে অভিযোগ করছেন পোশাক মালিকরা। একই কথা বলছেন শ্রমিক নেতারাও। কেউই চাচ্ছেন না জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতির প্রাণ পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হোক।
এই লক্ষ্যে গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির পাশাপাশি বিজিএমইএ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে। এসময় সবাই এই খাতে এরকম অস্থিরতা চান না উল্লেখ করে শ্রমিকদের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বিষয়টির সমাধান চান ভোক্তভোগী মালিকরাও। হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বরেন, শ্রমিক প্রতিনিধি ও মালিক প্রতিনিধির সমন্বয়েই গত ২৯ নভেম্বর নি¤œতম মজুরি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই গেজেট অনুসারে কোনো শ্রমিকের মজুরিই কমবে না। প্রত্যেকেরই পদ-পদবী এবং গ্রেড অনুসারে মজুরি বৃদ্ধি পাবে। তিনি জানান, শ্রমিকদের পূর্বের ভাতা ১১০০টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৮৫০টাকা করা। তাদের বাড়িভাড়াও বাড়বে ১০শতাংশ। এছাড়া গেজেট মোতাবেক বছর শেষে মজুরি বৃদ্ধিও চালু থাকবে। তাই এই বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। যারা এই আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে হুমকি দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন মজুরী কাঠামোতে কোন প্রকার অসামঞ্জস্য থাকলে জানুয়ারী মাসে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে। নতুন মজুরী কাঠামোর গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর মজুরী কাঠামোর দু-একটি ধাপ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার ফলে নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় কিছু কারখানাতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারা। কোনো গ্রেডেই বেতন কমবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারী মাসে নতুন কাঠামোতে মজুরী পেলে শ্রমিকদের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে।
শ্রমিক নেতারাও এই দাবি করেন। গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মোশারেফা মিশু বরেন, সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের পূর্বে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। কারখানা মজুরি নিয়ে মত-বিরোধ থাকলে গুজবে কান না দিয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ না করে বেতন হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
এদিকে ৮ ডিসেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, আশুলিয়ায় প্রায় ৮০টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না পোশাক কারখানা মালিকরা। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টেসের এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে ক্রয় আদেশ বাতিল হয়েছে অনেকগুলো। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে মালিকপক্ষ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি এভাবে পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় আঘাতের পাশাপাশি জনগণের একটা বড় অংশ বেকার হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্পাদনা : ইকবাল খান