আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা
এস এম এ কালাম : গত সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন ও বাজার মূলধনের পরিমাণ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বল কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ট না দিয়ে বোনাস শেয়ার দেয়ার কারণে বাজার মূলধন বাড়ছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিলো তিন লাখ ৮৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকার কারণে পুঁজিবাজার খারাপ সময় পার করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’
এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর অনেক কম। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রতিবন্ধকতা না থাকার কারণে দুর্বল কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ট না দিয়ে বোনাস শেয়ার দিচ্ছে। এতে করে বাজারে ক্যাশ ফ্লো বাড়ছে না। আর ক্যাশ ফ্লো না থাকলে মূলধন কমাটা স্বাভাবিক।’ এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী যখন নিষ্ক্রিয় থাকে সেক্ষেত্রে বাজার মূলধনের উপর একটি প্রভাব পড়ে। তাই বিএসইসির উচিত হবে এটিকে আইনের মধ্যে আনা। এছাড়া বর্তমানে বাজার থেকে অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব বাজার মূলধনে পড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ্ নাইম বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর নিষ্ক্রিয়তা এবং উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন না করার ফলে বাজার মূলধন কমছে। যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের বিষয়।’
অপরদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮১ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ৫১ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ।
অপর দুটি সূচকের মধ্যে গত সপ্তাহে ডিএসই ৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ১৮ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বা এক শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ১৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।
গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১১৭টির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। দাম কমেছে ২০৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দাম।
এদিকে সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫১১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৫৫৫ কোটি দুই লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার তিন কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮১ দশমিক ৭১ শতাংশই ছিলো ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এ ছাড়া বাকি তিন দশমিক ৭২ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের এবং দুই দশমিক ৩২ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহ জুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের দুই দশমিক ৮২ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের দুই দশমিক ৭১ শতাংশ। ৬৫ কোটি ২৩ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জ। লেনদেনে এরপর রয়েছেÑওয়াটা কেমিক্যাল, এসকে ট্রিমস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, ন্যাশনাল টি, খুলনা পাওয়ার, ফার্মা এইড এবং সোনালী আঁশ। সম্পাদনা : সোহেল রহমান ও রেজাউল আহসান